কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নে সরকারের অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান ও কর্মসূচি-৩ (ইজিপিপি) (৪০ দিনের মাটিকাটা কর্মসূচি) শ্রমিক নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শিমুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেল এর বিরুদ্ধে। অতি দরিদ্র শ্রমিকদের তালিকায় চেয়ারম্যান তার মনোনীত লোকজন সহ সাধারন জনগনের নিকট হতে টাকার বিনিময়ে শ্রমিকের নাম দিয়ে তালিকা প্রস্তুত করেছে বলে অভিযোগ করে এলাকাবাসী সহ বৈষ্যম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফুলবাড়ী উপজেলার আহব্বায়ক আব্দুল হাই সিদ্দিকী। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম বরাবর বৈষ্যম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফুলবাড়ী উপজেলার আহব্বায়ক আব্দুল হাই সিদ্দিকী একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে জানা যায়।
জানা যায় যে, কর্মহীন মৌসুমে দুস্থ পরিবারের স্বল্পমেয়াদী কর্মসংস্থান এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ইউনিয়নের হত দরিদ্রদের নাম থাকার কথা থাকলেও শিমুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেল বিষয়টি এলাকায় প্রচার প্রচারনা না করে তার মনোনীত লোকজনের নাম ঠিকানা দিয়ে ফরম পূরন করিয়ে লোক দেখানো লটারী করে লটারীর মাধ্যমে ১৯৯ জন ব্যক্তিকে ঐ প্রকল্পে কাজ করার জন্য শ্রমিক হিসেবে তালিকা প্রস্তুত করেন। তবে সরকারী নিয়ম মোতাবেক শিমুলবাড়ী ইউনিয়নে সর্বমোট ২৬২ জন হতদরিদ্র ৪০ দিনের মাটিকাটা কর্মসূচির আওতায় আসার কথা। অবশিষ্ট ৬৩ জন হতদরিদ্র শ্রমিক হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত চকিদার, ঝাড়ুদার সহ চেয়ারম্যান ও সচিবের নিজস্ব লোকজনের নাম উঠে এসেছে বলে জানা যায়।
গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে হাতে গোনা ৩০/৩৫ জন লোকের সামনে শিমুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেল তার ইউনিয়নের কতিপয় ইউপি সদস্যদের সাথে নিয়ে লটারীর মাধ্যমে অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান ও কর্মসূচি-৩ (ইজিপিপি) (৪০ দিনের মাটিকাটা কর্মসূচি) শ্রমিক নিয়োগের তালিকা প্রস্তুত করেন। তড়িঘরি করে লটারীর মাধ্যমে চেয়ারম্যান তার নিজস্ব ও পূর্বে মনোনীত ১৯৯ জন ব্যক্তিকে নির্ধারন করেন এবং পরবর্তীতে ৬৩ জন হতদরিদ্র শ্রমিক হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত চকিদার, ঝাড়ুদার সহ চেয়ারম্যানের নিজস্ব লোকজন সহ সাধারন জনগনের নিকট হতে টাকার বিনিময়ে নাম দিয়ে তালিকা প্রস্তুত করেন বলে এলাকাবাসী জানায়।
এলাকাবাসী সুত্রে আরো জানা যায়, আওয়ামীলীগ এর উপজেলার বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেল বর্তমান সময়েও আওয়ামীলীগ এর দোষরদের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম করে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করে আসছে। ৪০ দিনের মাটিকাটা প্রকল্পে প্রকৃত হতদরিদ্রদের সুযোগ না দিয়ে স্বচ্ছল পরিবারের লোকজনের নাম দিয়ে লোক দেখানো লটারীর মাধ্যমে তার মনোনীত লোকজনের তালিকা প্রস্তুত করা সহ ইউনিয়ন পরিষদের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অযোগ্য নিজ দলীয় ব্যক্তিকে উদ্দ্যেক্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে তার মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সরকারি কাজে অনিয়ম করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
৪০ দিনের মাটিকাটা কর্মসূচিতে লটারীর মাধ্যমে লোক নির্ধারন করার বিষয়ে ঐ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হুজুর আলী জানায় যে, মাটি কাটায় লোক নিবে শুনে আইডি কার্ড দিয়েছি। পরে শুনি লটারী হয়েছে। আমার নাম নাই। আমার জমি জমা নাই। বর্তমানে তেমন কোন কাজ কাম না থাকায় মাটি কাটায় নাম থাকলে খুব ভালো হতো। তিনি আরো বলেন গতবার যারা মাটিকাটা কাজ করেছে এবারো তাদের নাম আসছে।
একই এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানায় যে, গবির দুখি মানুষ, যাদের কিছুই নাই তাদের নাম দিয়ে মাটিকাটা উচিৎ। কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে শুনি ইউনিয়ন পরিষদে লটারির মাধ্যমে মাটি কাটায় নাম দিচ্ছে। পরে এসে দেখি যে, লটারীতে যাদের নাম উঠছে তারা বেশিরভাগ মানুষ বড়লোক, সবগুলো চেয়ারম্যানের লোক। এলাকার অনেক লোকজন জানে না যে, ৪০ দিনের জন্য মাটি কাটায় লোক নিবে, আইডি কার্ড জমা দিয়ে ফরম পূরন করতে হবে।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী সহ বৈষ্যম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবন্দের দাবী শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেল অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান ও কর্মসূচি-৩ (ইজিপিপি) (৪০ দিনের মাটিকাটা কর্মসূচি) শ্রমিক নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতি করায় পূর্বের তালিকা বাতিল করে নতুন করে তদন্ত পূর্বক প্রকৃত হত দরিদ্র শ্রমিকদের সমন্বয়ে তালিকা প্রস্তুত করা হোক।
অভিযোগের বিষয়ে শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেল মোবাইল ফোনে জানায় যে, আমি স্বচ্ছতার সাথে কাজ করার জন্য লটারীর মাধ্যমে ২৪৫ জন হত দরিদ্র এবং ইউনিয়ন পরিষদের ০৯ জন চকিদার ও ঝাড়ুদারের নাম দিয়ে সর্বমোট ২৬২ জন হত দরিদ্রের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা পিআইও অফিসে জমা দিয়েছি। যদি কোন অনিয়ম হয় তাহলে পূনরায় নামের তালিকা সংশোধন করা হবে।