জুলাই আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সেবা কার্যক্রম দীর্ঘ নয় মাস পর গত ৪ এপ্রিল সকাল থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই পাসপোর্ট সেবা নিতে দেখা গিয়েছে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। দীর্ঘ নয়মাস পরে পুনরায় পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হওয়ায় অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তবে বিশেষ চিহ্ন না থালেই পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে আর বিশেষ চিহ্ন থাকলে দাড়তে হচ্ছে না লাইনে!
গত বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে যায় নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এ আগুনে পাঁচ হাজারেরও বেশি তৈরি পাসপোর্ট, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন লুটপাটও করা হয়েছিল।
এরপর থেকে এ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবা প্রদান বন্ধ থাকলেও গত কয়েকমাস নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দাদের তিনভাগে ভাগ করে কেরাণীগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জ অফিস থেকে সেবা চালু রাখা হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এখন নিজ জেলার অফিসেই স্বাভাবিকভাবে সেবা পাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জবাসী।
সংস্কার শেষে নয় মাস পর এ কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শুরু দিন সকাল থেকেই ছিল সেবা প্রত্যাশীদের ভিড়। তবে পুনরায় নতুন রূপে শুরু হলেও ভোগান্তি রয়েগেছে আগের মতোই। বিশেষ এক চিহ্ন ছাড়া মিলছেনা কাঙ্খিত সেবা। এক রুম থেকে ঘুরতে হচ্ছে অন্য রুম। সব কিছু ঠিক থাকার পরেও এমন ভোগান্তিতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেবা নিতে আসা সেবাগ্রহীতারা।
গতকাল ৮ই মে সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখাযায়, পাসপোর্ট অফিসের বাহির থেকে ভিতর অব্দি লম্বা লাইন। একটু সামনে এগোতেই সোনারগাঁ থেকে পাসপোর্ট করতে আসা রুহুল আমিন নামের এক যুবক বলতে শুরু করে যে, সকাল ৯টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি এখন পর্যন্ত আমার কাগজপত্র গুলো জমা দিতে পারছিনা কিন্তু কিছুক্ষণ পর,পর কয়েকজন লোক আসে এবং ভিতরে যায় কাগজপত্র জমা দিয়ে বের হয়েযায় কিন্তু আমরা লাইনেই দাঁড়িয়ে আছি। তার এমন কথা শুনে তাকে প্রশ্ন করলাম লাইন ছাড়া কিভাবে কাগজপত্র ভিতরে জমা দিলো? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে রুহুল আমিন উত্তর দিলো,তাদের বিশেষ কিছু লোক আছে এবং কাগজে বিশেষ চিহ্ন থাকে তাই তাদের লাইনে দাড়াতে হয় না তারা সরাসরি ভিতরে গিয়ে সব কিছু জমা দিয়ে চলে আসে।
রুহুল আমিনের সাথে কথা বলে সামনে যেতেই রুহুল আমিনের মতো এমন অভিযোগে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন পাসপোর্ট অফিসের নীচতলায়। পাসপোর্ট অফিসের সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই শোনা গেলো একজন সেবাগ্রহীতার চেঁচামেচি। তিনি চিৎকার করে বলছেন আজকে দাদাল ধরতে পারিনি বলে সকাল থেকে এমন শাস্তি পেতে হচ্ছে। তার এমন কথা শুনে প্রতিবেদক তাকে প্রশ্ন করলো আপনার সমস্যা কি? উত্তরে তিনি বলেন আমি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বাসিন্দা আমি দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ ওমানে প্রবাস জীবন যাপন করছি। আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়াতে দেশে এসেছি নতুন করে নবায়ন করার জন্য। দেশে আসার আগে ভেবেছিলাম এখন মনে হয়ে আর দেশে অনিয়ম আর দুর্নিতি নামক শব্দটি আমাদের দেশে নাই। তবে এখন মনে হচ্ছে আমার চিন্তা চেতনা সম্পূর্ণ ভুল। আমার সব কাগজ পত্র সঠিক থাকার পরেও এখন তারা আমার কাবিন নামা চাইছেন এই কাবিন নামার জন্য আমার কাগজগুলো জমা নিচ্ছেন না। আমার জানা মতে পাসপোর্ট নবায়ন করতে কাবিন নামার প্রয়োজন হয়না তারা অযথা আমাকে সকাল থেকে হয়রানি করছে।
তিনি আরও বলেন, আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও উর্ধতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই এই অনিয়ম থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
এই বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মো. জালাম হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা এমন কোন কর্মকান্ড হাতে নাতে ধরতে পারলে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।