সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও বিকাশে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কর্মী সংঘের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম।
গত ২৯ মে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আ মা ম হাসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ১৫ দফা দাবি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে পেশ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান উত্তর পরিবেশে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ, প্রসার ও উন্নয়নের এক অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা বিশ্বাস করে সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে রাষ্ট্র ও সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি আরো বলেন,জাতিকে উন্নত করতে এবং মানবিক আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে জাতিকে নিজস্ব সংস্কৃতিমনষ্ক করে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নাই।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের সুদৃষ্টি কামনা তিনি ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে সাংস্কৃতিক বিকাশে নূন্যতম ২% অর্থ বরাদ্দ প্রদানের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কর্মী সংঘের পক্ষ থেকে খন্দকার শাহ আলম উত্থাপিত ১৫ টি দাবি নিম্নরূপঃ
০১) দেশের প্রত্যেকটি জেলায় ও উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমীর কার্যক্রম বিস্তৃত করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
০২) প্রত্যেকটি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাচ,গান, আবৃত্তি, অভিনয় ও চিত্রকলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
০৩) ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় ও জেলা শহরে সাংস্কৃতিক অনুশীলন ও চর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মুক্ত মঞ্চ নির্মাণসহ পাঠাগার,মহড়া কক্ষ ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
০৪) সরকারি অর্থায়নে একটি গবেষণাধর্মী প্রকল্প চালু করতে হবে।
০৫) সাংস্কৃতিক কর্মীদের জন্য একটি কার্যকর ও সক্রিয় কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করতে হবে।
০৬) সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের জন্য কর মওকুফের ব্যবস্থা করতে হবে, বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা প্রদান ও অন্যান্য সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
০৭) শিল্পী তালিকাভুক্তি এবং সম্মানীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের হয়রানি ও বৈষম্য দূরীকরণসহ সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে।
০৮) রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে শিল্পকর্ম ও সাহিত্য কর্মের জন্য জাতীয় পদক প্রদান করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।একটি নিরপেক্ষ জাতীয় পদক প্রদান পরিষদ গঠন করতে হবে।
০৯) প্রত্নতাত্ত্বিক উদঘাটন ও সংরক্ষণ খাতের পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট জনবল বৃদ্ধি করতে হবে।
১০) উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বয়সভিত্তিক পূর্বের প্রচলিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা পূণরায় চালু করতে হবে। জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১১) নাটক, চলচ্চিত্র, সংগীত, নৃত্যকলা, সাহিত্য, চিত্রকলাসহ সংস্কৃতির সকল বিষয়ে আন্তর্জাতিক উৎসব আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১২) সারাদেশে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শিল্পীদের জন্য সম্মানজনক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৩) সংস্কৃতিসেবী সংগঠনগুলোর অনুদান এবং অনুদানের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য আরো অধিক অর্থ বরাদ্দ থাকতে হবে জাতীয় বাজেটে।
১৪) আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার লক্ষ্যে আমাদের নৃত্যদল,নাট্যদল, সংগীত দল, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও চিত্রকলা প্রদর্শনীর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৫) সংস্কৃতিসেবী সংগঠনগুলোর জন্য সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত মিলনায়তন সমূহের ভাড়া কমাতে হবে এবং এই ক্ষেত্রে ভ্যাট আদায় বন্ধ করতে হবে।
খন্দকার শাহ আলম বলেন, উপরে উল্লেখিত ১৫ টি দফা বাস্তবায়নে আগামী অর্থবছরে প্রয়োজনীয় ২% অর্থ বরাদ্দ থাকতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কর্মী সংঘের নাট্য বিভাগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল আজিজ,নৃত্যবিভাগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নীলুফার ওয়াহিদ পাপড়ি ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন বয়াতী।