সাহানুর রহমান,রংপুর: আর মাত্র ক’টা দিন পরেই মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদকে সামনে রেখে রংপুর অঞ্চলজুড়ে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কোরবানির পশু ক্রয় থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সকল বিষয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
পশুর হাটগুলো এখন জমজমাট:
রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো। সিটি কর্পোরেশন এলাকার লালবাগ, বড়ভিটা, এবং জেলার পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছার স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর। হাটে উঠেছে দেশীয় জাতের গরু, ছাগল, ভেড়া। ব্যাপারীরা দূর-দূরান্ত থেকে পশু নিয়ে আসছেন এবং ক্রেতারাও নিজেদের পছন্দ ও সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কেনা শুরু করেছেন। স্থানীয় খামারিদের পালিত স্বাস্থ্যবান পশুর চাহিদা এবার বেশি বলে বিক্রেতারা জানান। তবে, দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি চলছে।
গৃহস্থালির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত নারীরা:
কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি শুধু পশু কেনাতেই সীমাবদ্ধ নয়। গৃহস্থালির অন্যান্য প্রস্তুতিতেও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা। ঈদের দিন কোরবানির মাংস প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য ছুরি, দা, বঁটিসহ অন্যান্য ধারালো সরঞ্জাম প্রস্তুত করা হচ্ছে। কেউ কেউ নতুন করে সরঞ্জাম কিনছেন, আবার কেউ পুরোনো সরঞ্জাম ধারালো করে নিচ্ছেন। মসলাপাতি কেনাকাটার পাশাপাশি ফ্রিজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে, যাতে কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করা সহজ হয়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর:
কোরবানির ঈদে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পশু জবাইয়ের স্থান পরিষ্কার রাখা, রক্ত ও বর্জ্য অপসারণ এবং পরিবেশ দূষণ রোধে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সচেতন থাকছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন থেকেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জবাইয়ের পর দ্রুত বর্জ্য অপসারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে নির্ধারিত স্থান তৈরি করা হয়েছে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি:
কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে রংপুর অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি এসেছে। পশুর হাটগুলোতে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। এর পাশাপাশি মসলা, ছুরি-বঁটি, পোশাক ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানেও বিক্রি বেড়েছে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও এই সময়ে ভালো লাভের আশায় বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন।
নিরাপত্তার জোরদার:
ঈদের আগে ও পরে পশুর হাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। চুরি, ছিনতাই ও অন্যান্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ প্রশাসন সজাগ রয়েছে। হাটে জাল টাকার লেনদেন রোধেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে, রংপুর অঞ্চলে কোরবানির ঈদকে ঘিরে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এই ঈদ সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ ও শান্তি, এই কামনা নিয়েই চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।