দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ইউজিপি প্রকল্পের আওতায় ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির কাজ প্রায় এক মাস আগে শেষ হলেও মজুরির টাকা আজও পাননি শ্রমিকরা। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ৩ হাজার ৮৪৫ জন শ্রমিক ৪০ দিন কাজ করেও এখনও মজুরির টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে শ্রমিকরা অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর-২০২৩ থেকে ৮ জানুয়ারি-২০২৪ পর্যন্ত উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। এ কাজের জন্য ৩ হাজার ৮৪৫ জন শ্রমিক প্রত্যকে দৈনিক ৪০০টাকা মজুরি পাবেন। প্রত্যক ওয়ার্ডে একজন করে সরদার দৈনিক ৪৫০টাকা করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাজিরা ভাতার টাকা পাবেন। কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হলেও মজুরির টাকা না পাওয়ায় হতাশ নিম্নআয়ের শ্রমিকরা।
উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের শ্রমিক আইনুদ্দিন বলেন-‘আমরা গরিব মানুষ, দিন মিলাই দিন খাই। কিন্তু কাজ করে যদি মজুরি না পাই তাহলে কী রকম হয়? কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে প্রচন্ড শীতের কারণে বেশ কয়েকদিন কাজ করতে পারি নাই। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে।’
ফিরোজা খাতুন ফেরো নামে আরেক নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিনের আয় দিয়ে কষ্ট করে সংসার চালাই। প্রায় দেড় মাস ধরে কষ্ট করে কাজ করে এক টাকাও মজুরি পাইনি। এদিকে, ঠান্ডায় কয়েকদিন কোন কাজ করতে পারি নাই। টাকার অভাবে শীতের কাপড়ও কিনতে পারি নাই। আশা করেছিলাম, কাজ শেষে টাকা পাবো। মানুষের নিকট টাকা ধার করে চাল কিনে ভাত খেয়েছি। সে টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। কাজ করেও টাকা পাইনি। কতদিন পরে যে টাকা দেবে তা অফিসাররা ভালো জানে।’
শ্রমিক আনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দিনমজুর মানুষ। অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমাদের সংসার চলে। আমাদের প্রথম ২০ দিন কাজ করে অর্ধেক টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু টানা ৪০ দিন কাজ করেও আমাদের এক টাকাও মজুরি দেয়নি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। এনজিও’র কিস্তির টাকা দিচ্ছি অন্যের নিকট সুদে টাকা নিয়ে। আমাদের মজুরির টাকা দ্রুত দেয়া হলে আমাদের খুব উপকার হয়।’
কর্মসৃজন প্রকল্পের আব্দুলপুর ইউনিয়নের শ্রমিক সর্দার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকরা প্রায় ফোন করে জানতে চান কোনদিন টাকা দেবে। তাদের চাপের কারণে অনেক সময় ফোনই ধরি না। ইউএনও স্যার ও পিআইও স্যারদের নিকট গিয়ে বার বার বলি স্যার শ্রমিকদের মজুরির টাকা কোনদিন দেবেন। স্যারেরা বলেন-তোমাদের বিল করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, আসলে দেয়া হবে। কবে নাগাদ বিল পাবো স্যারেরাও সঠিকভাবে বলতে পারে না।’
আব্দুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ময়েনউদ্দিন শাহ্ বলেন, ‘শ্রমিকরা গরিব মানুষ। তারা দিনে এনে দিনে খায়। মজুরির টাকা না পেয়ে তারা খুব কষ্টে আছেন। মন্ত্রণালয়ে বিল আটকে আছে। আমরা চেষ্টা করছি। বিলটা ছাড়লে শ্রমিকরা বিল পেয়ে যাবেন।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকদের বিল দেয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই তারা মজুরির টাকা পেয়ে যাবেন।’
কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ কে এম শরীফুল হক বলেন, ‘শ্রমিকদের মজুরি দ্রুত পাওয়ার বিষয়ে কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই শ্রমিকরা তাদের নির্ধারিত মজুরি পেয়ে যাবেন।’