গতকাল ২৬ জুন ২০২৫,(১২আষাঢ় ১৪৩২) বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে “শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মশালা-২০২৫” অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“নতুন বাংলাদেশে শিশু ও নারীর নিরাপদ আশ্রয় আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার” শ্লোগানকে ধারন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব শারমীন এস মুরশিদ। প্রধান অতিথির আগমনের সাথে সাথেই একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। প্রধান অতিথি নিজেই কর্মশালার উম্মুক্ত আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ডঃ প্রকাশ কান্তি চৌধুরী। বিশেষজ্ঞ বক্তব্য রাখেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ফৌজিয়া করিম ফিরোজ ও ফেরদৌস সুলতানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘৭১,’৯০ ও সর্বশেষ ২৪এর গণ অভ্যুত্থানে নারীদের যে দুঃসাহসিক ভূমিকা তা এক কথায় অসাধারণ। তিনি বলেন, জীবন চলার পথে প্রতিকূলতা থাকবেই তবুও এগিয়ে যেতে হবে কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণের পথে।এটা তো নিরেট সত্য কথা যে , আমাদের সমাজে নারী ও শিশুরাই সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে।পিতা হিসেবে হোক,স্বামী হিসেবে হোক অথবা ভাই হিসেবে হোক নারীদের সুরক্ষায় পুরুষদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে সর্বাগ্রে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একজন নারীর নিরাপত্তা আরেকজন নারী দ্বারাই বিঘ্নিত হয়। বর্তমান সরকার নারী সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যেতে চায়।
কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট নারী অধিকার কর্মী, জুলাই যোদ্ধা ও ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শাহজাদী ফানান্না কথা। তিনি ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে বলেন যে আমার মনে হয় বাংলাদেশ সরকারের যতগুলো মন্ত্রণালয় রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল মন্ত্রণালয় হচ্ছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। নারীদের উন্নয়নে যত কথা বলা হয়, কার্যকর হয় তারচেয়ে অনেক কম। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন,’৭১ এর মতো আমরা ‘২৪কেও হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। ‘২৪শের আন্দোলনে নারীদের ভূমিকার ডকুমেন্টারি এই সরকারের আমলেই থাকা উচিত। ‘৭১ এর নারীদের পরিচয় শুধুই বীরাঙ্গনা। জুলাইয়ের নারী যোদ্ধারাও আজ পরিচয় বিহীন হারিয়ে যাওয়ার পথে। আজকে শহীদ জুলাই যোদ্ধা হিসেবে আবু সাঈদ ও মুগ্ধদের নাম যেভাবে উচ্চারিত হয় সেভাবে নাঈমা বা নাফিজাদের নাম বলা হয় না। জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ ভাগে হাজার হাজার নারী থাকলেও আজ তাদেরকে নেতৃত্বের জায়গায় পাওয়া যায় না।অথচ, আহত জুলাই যোদ্ধা ভাইদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে এই নারীরা। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের ব্যাগে থাকতো চিকিৎসা সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় ঔষধ। আজ আমরা যখন উচ্চস্বরে কথা বলি তখন আমাদেরকে কমিউনিস্ট বলা হয়,বলা হয় আমরা ধর্মীয় বিধিবিধান মানি না। আমাদেরকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে কটুক্তি করা হয়, ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনকে অতীষ্ঠ করা হয়।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন পূর্বক সমাপনী বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি।