1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ০৩:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
খুলনা কেএমপির হরিণটানা বাবলু দত্ত হত্যায় সম্পৃক্ত ২ জন আসামী গ্রেফতার এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার খুলনায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বরগুনায় ৭ ভুয়া ডাক্তার আটক – ৩ জনকে ১ লাখ টাকা করে জড়িমানা বরিশালে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) সদস্য ফরম ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের শুভ উদ্ভোদন নাউ ডোবা গোল চক্করে শরীফ হোটেল কম দামে ঘরোয়া স্বাদের খিচুড়ির জন্য উপচে পড়া ভিড় নিখোঁজের ২১ ঘন্টার পর মাদারীপুরের শিবচরে পুকুর থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী মরদেহ উদ্ধার আক্কেলপুরে বিএনপির ৩১ দফা প্রচারে সাবেক ডিসি আব্দুল বারীর বর্ণাঢ্য পথযাত্রা ও জনসমাবেশ মাদারীপুরে বিষাক্ত সাপে কাটা গৃহবধূকে দিনভর ওঝার ঝাড়ফুঁক।হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায় মৃত্যু নাচোলে চাঞ্চল্যকর রাজু হ’ত্যায় জড়িত ৩ জন আটক ধর্মপাশায় গ্রাম আদালত বিষয়ক ক্যাম্পাইন অনুষ্ঠিত

ভ্রাম্যমান নরসুন্দর নপিতের পেশা বিলুপ্তির দিকে

শাহজান সুমন
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

যুগের বিবর্তনে বদলে গেছে মানুষের জীবনযাপন ও পেশার ধরন। আধুনিকতার ঢেউয়ে গ্রামবাংলার বহু চেনা পেশা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনই এক পেশা ‘ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর’। যারা একসময় হাটবাজারে কাঠের বাক্স, পিঁড়ি ও সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হতেন। ক্ষুর, কাঁচি, আয়না, চিরুনি আর সাবান হাতে তারা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার চুল-দাড়ি কেটে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাদের দেখা আজ আর তেমন মেলে না।

একসময় গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য অংশ হলেও বর্তমানে এই পেশার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দায়। শহর তো বটেই, গ্রামাঞ্চলেও আধুনিক সেলুনের প্রচলন হওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের পদচিহ্ন। আধুনিকতার ভিড়ে এখনও কিছু প্রান্তিক নরসুন্দরের দেখা মেলে গ্রামীণ হাটগুলোতে। লালমনিরহাট সদরের বড়বাড়ী হাটে দেখা নরসুন্দর বাবুল চন্দ্র শীল-এর সাথে। খোলা আকাশের নিচে কাঠের পিঁড়িতে বসিয়ে চুল-দাড়ি কাটেন ঠিক আগের মতোই।উপজেলা কুমিড়ীরহাটের কমল নরসুন্দরের সঙ্গে দৈনিক গণকন্ঠ কে সে বলে এখন নেই এসব বিলুপ্তির দিকে।

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই পেশায় যুক্ত বাবুল চন্দ্র শীল বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, ‘আগে দিনে যা আয় হতো, তা দিয়ে সংসার চালানো যেতো। এখন সারাদিন খেটে আয় হয় ৩৫০-৪৫০ টাকা। এ আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। দোকান ভাড়া নেওয়ারও সামর্থ্য নেই। সরকারের সহায়তা পেলে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে নিজের অবস্থার উন্নতি করতে পারতাম।’

প্রবীণ নরসুন্দর পরিমল চন্দ্র শীল বলেন, ‘পথের পাশে বসেই পার করেছি ৩০-৪০ বছর। এই পেশাতেই জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলাম। আয় খুব একটা বাড়েনি, অথচ ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ।’

ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের প্রধান গ্রাহক সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ। যেখানে আধুনিক সেলুনে চুল কাটা ও দাড়ি শেভের জন্য গুনতে হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। সেখানে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের কাছে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকায় চুল ও দাড়ি কাটানো যায়। কখনও কখনও আরও কমে পাওয়া যায়। তাই রিকশাচালক, দিনমজুরসহ নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা এদের ওপরই ভরসা করেন।

চুল কাটাতে আসা গ্রাহক ইমরান  আলী বলেন, ‘আধুনিক সেলুনে যাওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই আমরা এই ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের কাছেই চুল কাটাই।’

আফসার হোসেন বলেন,  ‘ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে হাটে গিয়ে চুল কাটাতাম। এখনও সেই অভ্যাস রয়ে গেছে। তবে নতুন প্রজন্ম হয়ত এসব আর দেখতে পাবে না।’

বড়বাড়ী হাট নরসুন্দর সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র শীল বলেন, ‘আগের মতো কাজ পায় না ভ্রাম্যমাণ এই নরসুন্দররা। এই পেশা টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন। সহযোগিতা  পেলে  দোকান করে সম্মানজনকভাবে পেশাটি চালিয়ে যেতে পারবে তারা।’

সমিতির সভাপতি কাজল চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমরা শুধু নরসুন্দর নই, আমরা বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির বাহক। অথচ আমরা আজ অবহেলিত।’

এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের পেশা হারিয়ে যাচ্ছে। তবে কেউ যদি পেশাগত বা সামাজিক কারণে পিছিয়ে পড়ে এবং সহযোগিতা চান, তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।’

গ্রাম বাংলার এই ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দররা কেবল পেশাজীবী নন, তারা এক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আধুনিকতার ভিড়ে টিকে থাকা এই মানুষগুলো আমাদের ঐতিহ্যের জীবন্ত সাক্ষী। প্রয়োজন এখন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সহানুভূতির হাত। যাতে তারা নিজেদের পেশায় মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেন।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com