সাবহেডলাইন: অযত্নে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা আজ জীবিকা, শিল্প আর স্বপ্ন বোনার উপকরণ; বদলে দিচ্ছে গ্রামের নারীদের জীবন।
এক সময় যে কচুরিপানাকে মানুষ “অপ্রয়োজনীয় আগাছা” বলে তিরস্কার করত, সেই কচুরিপানা আজ একেকজনের স্বপ্নের সোপান হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরিশালের দেলবারি গ্রামের নারীরা এখন কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করছেন হস্তশিল্প, ঘরের শোপিস, ব্যাগ, ম্যাট, ডেকোরেশন আইটেমসহ নানা জিনিস। এইসব পণ্যের বাজার এখন ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে অনলাইনে, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও।
স্বপ্নের শুরু:
দেলবারি গ্রামের গৃহবধূ হাসিনা বেগম বলেন,
“একসময় ঘরেই বসে থাকতাম, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। এখন কচুরিপানা দিয়েই মাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় করি। ছেলেমেয়ের পড়ালেখা, নিজের খরচ সব সামলাতে পারছি।”
এই রূপান্তরের পেছনে ছিল একঝাঁক স্বপ্নবাজ নারীর চেষ্টা ও একটি এনজিওর সহায়তা, যারা প্রথম এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করে।
কিভাবে তৈরি হয় এই শিল্প:
পানিতে ভেসে থাকা কচুরিপানা সংগ্রহ করে সেগুলো শুকিয়ে শক্ত ডাঁটা অংশ দিয়ে বানানো হয় পণ্য। এটি ১০০% প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব। নারীরা এখন এসব দিয়ে তৈরি করছেন টেবিল ম্যাট, ব্যাগ, গহনা বক্স, বইয়ের কাভার, ছাতার হ্যান্ডেলসহ নানান নকশাদার জিনিস।
নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তি:
এ কাজে জড়িত আছেন গ্রামের অন্তত ৩০০ নারী। কেউ কাজ করছেন বাড়িতে, কেউ ছোট কর্মশালায়। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়েছেন অনেকে। শুধু পরিবার নয়, সমাজে তাদের পরিচিতি বেড়েছে—তারা এখন “হস্তশিল্পী”, “উদ্যোক্তা”।
চ্যালেঞ্জ আর সম্ভাবনা:
অবশ্য সব কিছুই সহজ ছিল না। কাঁচামালের প্রক্রিয়াজাতকরণ, পণ্যের ডিজাইন উন্নয়ন, বাজারজাতকরণ সবই একসময় ছিল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহজলভ্যতা অনেক কিছু বদলে দিয়েছে।
এক সময় যাকে সবাই অবহেলা করত, সেই কচুরিপানাই এখন গ্রামের নারীদের জীবনের চালিকাশক্তি। কচুরিপানার সৃষ্ট পণ্যে যেমন রয়েছে নান্দনিকতা, তেমনি প্রতিটি সুতোর বাঁধনে জড়িয়ে আছে হাজারো নারীর স্বপ্ন। দেলবারির এই সাফল্য শুধু একটি গ্রামের নয় এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের জেগে ওঠার প্রতীক।