খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায় দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ দায়েরের প্রতিবাদে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল, ৬ জুলাই (রবিবার), কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার এবং সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধের জোর দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ২১ মে, ২০২৫ তারিখে। এনসিপি নেতা আবু বক্কর সিদ্দিকের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। দৈনিক জনবানী, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক কালবেলা, এটিএন টেলিভিশনসহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে এই আপত্তিকর ভিডিওর বিষয়টি ফলাও করে প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক নয়া দিগন্তের কয়রা উপজেলা প্রতিনিধি জিএম গোলাম রব্বানী এবং প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক জনবানী পত্রিকার প্রতিনিধি আব্দুর রউফ মল্লিকের বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
“গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ও আইনের অপব্যবহার”
মানববন্ধনে কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শরিফুল আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, “কয়রা উপজেলা প্রেসের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম রব্বানী এবং দৈনিক জনবানী পত্রিকার প্রতিনিধি আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ এবং আইনের অপব্যবহার করে হয়রানি করা হচ্ছে।” তিনি এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবি জানান। শরিফুল আলম আরও যোগ করেন, এনসিপি নেতার অপকর্ম ভাইরাল হওয়ার পর সাংবাদিকরা শুধু সেটি তুলে ধরেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এখনও পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি, বরং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় পুরো সাংবাদিক সমাজ বিস্মিত হয়েছে।
বক্তাদের ক্ষোভ ও দাবি
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি মোস্তফা শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিয়াছাদ আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম এ রউফ, সহ সভাপতি শেখ কওছার আলম, প্রভাষক শহিদুল্লাহ শাহিন, শেখ মনিরুজ্জামান মনু, ফরহাদ হোসেন, শেখ জাহাঙ্গীর কবির টুলু, গাজী আব্দুস সালাম, গাজী আবুল বাসার, মিজানুর রহমান লিটন, হাবিবুল্লাহ হাবিব, শেখ আরিফুর রহমান আরিফ, জিয়াউর রহমান ঝন্টু, ডিএম জাহিদুর রহমান, ফারুক আজম প্রমুখ। বক্তারা প্রত্যেকেই অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং হুঁশিয়ারি দেন যে, যদি মামলা প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলাকে ‘মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে কয়রার সাংবাদিক সমাজ এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। তাদের দাবি, গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে এবং সত্য তুলে ধরা তাদের দায়িত্ব। এই ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য একটি অশনি সংকেত।