যশোরের কেশবপুরে কলেজ ও স্কুলের বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য এবং যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) শহীদ লে: মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মশিয়ার রহমান যশোরের একটি আদালতে মামলাটি করেন। মামলার অন্য তিন আসামি হলেন—শাহীন চাকলাদারের পিএস আলমগীর সিদ্দিকি টিটো, তার স্ত্রী শামীমা পারভিন রুমা এবং কেশবপুরের মাগুরখালী গ্রামের মৃত সোবহান গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম।
বাদীপক্ষের আইনজীবী তাহমিদ আকাশ জানান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আঞ্জুমান আরা বেগম মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আসামিরা সমন্বিতভাবে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার মতো কাজের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন। বাদী নিজে শহীদ লে: মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ও রেজাকাটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি থাকার সুবাদে ওই সময় আসামিদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন।
তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কলেজের স্নাতক ও বিএমপি শাখার এমপিও আদেশ এবং কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষকদের এমপিও ছাড় করানোর জন্য ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং স্কুলের মাধ্যমিক শাখার এমপিও আদেশের জন্য ২০ লাখ টাকা দিতে হবে।
বাদী শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে ২০২০ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত আলমগীর সিদ্দিকি টিটোর বাড়িতে দফায় দফায় শাহীন চাকলাদার ও অন্যান্য আসামিদের হাতে নগদ টাকা প্রদান করেন। তিনি অভিযোগ করেন, টাকা মেশিনে গুনে গ্রহণ করা হয় এবং শাহীন চাকলাদার নিজেও তা বুঝে নেন।
আসামিরা ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত কোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নানা ধরনের টালবাহানা করেন এবং একপর্যায়ে সাফ জানিয়ে দেন—“এইসব কাজ আর হবে না।”
পরবর্তীতে বাদী মন্ত্রণালয়ে অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, চারজন আসামি টাকা ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু মামলা ও রাজনৈতিক প্রভাবের ভয়ে তিনি এতদিন মুখ খুলতে পারেননি।
সবশেষ ২০২৫ সালের ২০ জুন টিটো ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে টাকা ফেরতের অনুরোধ করলে তারা টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দেন। তারা বলেন, “আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসছে, আমাদের কিছুই হবে না।”
সেই প্রেক্ষাপটে সাহস সঞ্চয় করে বাদী মশিয়ার রহমান আদালতের দ্বারস্থ হন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।