রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় হঠাৎ করে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে ফসলী মাঠসহ জনস্বাস্থ্য। কয়েক বছর থেকে দিন দিন তামাকের চাষাবাদ বাড়ছে এমন দাবী অনেক কৃষকের। আবাদী মাঠে রবি শস্যের পরিবর্তে এখন অনেকে করছেন বিষ পাতা তামাকের চাষ। একসময় যেসব আবাদি জমিতে ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, আলু, পটলসহ বিভিন্ন রবি শস্যচাষাবাদ করা হতো। এখন সেসব জমিতে অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষ করছেন অনেক কৃষক। ফলে এ অঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্র তামাকের বিষে উর্বরতা হারিয়ে নীল হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে জনস্বাস্থ্য ঝুকির আশংকা।তামাকের বিষ কেবল চাষকৃত জমিই গ্রাস করে না, বরং বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী জমিতেও।
ফলে দীর্ঘ মেয়াদে উর্বরতা হারায় পার্শ্ববর্তী জমির মাটি, হ্রাস পায় ফলন। তাই হঠাৎ করে উপজেলার বেশকিছু এলাকায় তামাক চাষ বৃদ্ধির বিষয়টি পার্শ্ববর্তী জমির মালিকদেরকেও চিন্তায় ফেলেছে। তবে কৃষি বিভাগের দাবি গত বছরের তুলনায় চলতি বছর তামাক চাষ কমেছে। তথ্যমতে মিঠাপুকুর উপজেলায় ২০২১-২২ মৌসুমে ৪০ হেক্টর, ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩২ হেক্টর এবং ২০২৩-২৪ চলতি মৌসুমে ২১ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। উপজেলার মির্জাপুর ও বালারহাট ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশের জমি এবং বসতবাড়ির পাশেই অবাধেই বিষপাতা তামাক চাষাবাদ করা হয়েছে। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও বেশকিছু জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এই জমিগুলোতেই আগে ধান-ভুট্টা ও সবজি চাষ হতো। কিš‘ কিছু দেশি-বিদেশি সিগারেট কোম্পানির প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে,তামাক চাষে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কৃষক ও তার পরিবারের সদস্যরাও স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। স্থানীয় তামাক চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জমিতে খাদ্যশস্য চাষাবাদ করে খুব বেশি লাভ হয় না। তামাক চাষ করতে বীজ, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ প্রতি বিঘা জমিতে মোট ব্যয় হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা, লোকসানের কোনো আশঙ্কা নেই। এ কারনেই চাষিরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে। তবে, প্রয়োজনীয় সরকারি প্রণোদনা এবং সহজে কৃষি লোন পেলে তামাক চাষ ছেড়ে খাদ্যশস্য চাষাবাদ করার কথা জানায় কৃষকরা। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের কৃষি প্রণোদনা এবং সহজে কৃষি লোন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় এ অঞ্চলের প্রকৃত কৃষকরা। প্রণোদনা ও লোন পায় বিভিন্ন নেতা ও কর্মকর্তাদের পছন্দের লোকজন। এমনকি প্রশিক্ষণ থেকেও বঞ্চিত প্রকৃত কৃষক। মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মেডিকেল অফিসার আবদুল হালিম লাবলু বলেন, তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহারের ফলে মুখে ক্যানসার, উ”চ রক্তচাপ, ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো ঝুঁকিও থাকে। এ ছাড়াও যে এলাকায় তামাক চাষ হয়, তার আশপাশের মানুষেরও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল আবেদীন বলেন, তামাক চাষের বিষয়ে আরও সুস্পষ্ট আইন করা দরকার। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনার আওতায় নিয়ে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করছি। ইউএনও স্যার, ওসিসহ বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে তামাক চাষ বন্ধ করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি তামাক চাষিদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানির লোভনীয় অফারে কিছু কিছু কৃষক না বুঝেই তামাক চাষ করেছেন। সুস্পষ্ট আইন না থাকায় কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা ছাড়া কিছুই করার নেই কৃষি কর্মকর্তাদের।