নিয়োগ বোর্ড নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার এবং শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের অডিও ভাইরালসহ নানা দুর্নীতির স্কিনশট ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এ সকল কারণে নিয়োগ স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছে শিক্ষকদের একাংশ ও কর্মকর্তারা। এদিকে ইমাম নিয়োগ বোর্ড প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানালে পরবর্তীতে বিকেল ৩টার দিকে ভিসির বাসভবনে এ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ড চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগের জন্য নিয়োগ বোর্ড ছিল। এই নিয়োগ বোর্ড স্থগিতসহ ১৩ দফা দাবিতে সকাল ৯টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান করে কর্মকর্তারা। পরে কর্মকর্তারা ভিসির কার্যালয়ে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিরোধী শিক্ষকদের একাংশ ভিসির কার্যালয়ে এসে নিয়োগ স্থগিত সহ ভিসির নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। তাদের দাবি গুলো হলো, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকল নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত অন্য কোন নিয়োগ দেওয়া যাবে না, বিভাগের প্লানিং কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না, ইতোমধ্যে প্রচারিত সকল দুর্নীতির তদন্ত দ্রুততম সময়ে শেষ করতে হবে।
দাবি গুলোর এক পর্যায়ে ভিসি ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাঝে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ‘জয় বাংলা’স্লোগান দিতে দিতে ভিসির কার্যালয়ে প্রবেশ করে। সেখানে তারা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ‘দালাল,দূর্নীতিবাজসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এদিকে নিজে শিক্ষকদের হেনস্তা করার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ডেকেছে বলে দাবি করেন ভিসির রুমে অবস্থানরত শিক্ষকদের একাংশ। তবে এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, সেখানে যারা এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তারা ছাত্রলীগের সাবেক বিভিন্ন পদের নেতাকর্মী। তারা দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরে দিন মজুর হিসেবে কাজ করছে। এখন তারা যদি নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয়ে আন্দোলন করে তাহলে এখানে ছাত্রলীগের কিছু করার নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা সবসময় সচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার পক্ষে এবং কোন ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে আমরা জড়িত নই।
এদিকে এ ঘটনার পর শিক্ষক সমিতি এবং শাপলা ফোরামের শিক্ষকদের একাংশ মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এসময় তারা ভিসির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগ তোলেন এবং ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পর নিয়োগ কার্যক্রমে যাওয়ার দাবি জানান তারা। এছাড়াও শিক্ষক সমাজকে লাঞ্চনার প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট। সংগঠনটির সভাপতি প্রফেসর ড. কাজী আখতার হোসেন ও প্রফেসর ড. তপন কুমার জোদ্দার সাক্ষরিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গতকাল (সোমবার) ইমাম নিয়োগ সংক্রান্ত ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদের একটি হোওয়াটসঅ্যাপের কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে জাহাঙ্গীর স্যার ও ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছেন কাজটা হয়ে যাবে এমন কথা লেখা দেখা যায়। তবে এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়। তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যারা এটি ছড়িয়েছে তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীদ হাসান মুকুট বলেন, কর্মকর্তাদের নায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।
শাপলা ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন বলেন, ভিসির নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এজন্য আমরা চায় ইউজিসির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকল নিয়োগ বন্ধ থাকুক।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আজকে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি নজীরবিহীন ঘটনা। আমি বিষয়টি তে মর্মাহত। আমি মনে করি যারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের যে মান মর্যাদা সেটি নষ্ট করেছে। আমি এই বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ আশা করছি।
ভিসি নিজে শিক্ষকদের হেনস্তা করার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কার্যালয়ে ডেকে এনেছিল বলে দাবি করেন অবস্থানরত শিক্ষকরা। তবে ভিসি এটি অস্বীকার করে বলেন, আমি এর সাথে কোন ভাবেই জড়িত ছিলাম না। শিক্ষকদের সাথে আলোচনা চলাকালীন ছাত্রলীগের প্রবেশ অনাকাঙ্ক্ষিত। তাদের এভাবে প্রবেশ করা উচিত হয়নি। তিনি আরো বলেন, কোন ধরনের নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে কখনো জড়িত ছিলাম না। সততা নিয়ে কাজ করছি এবং এই সততা নিয়ে লড়াই করতে চাই।