বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অসুস্থ শকুন উদ্ধারের পর বনবিভাগে হস্তান্তরপাথরঘাটা (বরগুনা): বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় ভাসমান অবস্থায় অসুস্থ একটি শকুন উদ্ধার করেন জেলেরা। পরে সাতদিন জেলেদের ট্রলারেই রেখে খাবার খাইয়ে সুস্থ করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ট্রলারের মাঝি দেলোয়ার হোসেন বনবিভাগের কাছে শকুনটি হস্তান্তর করেন।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় দেলোয়ারের মালিকানা এফবি বেলায়েত ট্রলারে শকুনটি উদ্ধার করে রাখা হয়।
ট্রলারের মালিক ও মাঝি দেলোয়ার হোসেন বলেন, গভীর সাগরে মাছ ধরার জন্য জাল ফেলে অপেক্ষা করছিলাম। অনেকক্ষণ ধরে শকুনটি সাগরে পানির ওপরে ভাসছিল।প্রথমে ভেবেছিলাম এমনিতেই শকুনটি ভাসছে। পরে দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থায় দেখে ট্রলার চালিয়ে পাশে গিয়ে উদ্ধার করি।শরীরে কোনো আঘাত না থাকলেও শারীরিকভাবে দুর্বলতা মনে হওয়ায় ট্রলারে রেখেই খাবার খাইয়ে রাখি। পরে মঙ্গলবার ট্রলার নিয়ে কুলে এসে বনবিভাগের কাছে শকুনটি হস্তান্তর করা হয়।হরিণঘাটা বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, জেলেদের থেকে একটি শকুন আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা জানান, শকুনটি অসুস্থ অবস্থায় সাগর থেকে উদ্ধার করেছেন। আমরা পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখবো সুস্থ থাকলে বনে অবমুক্ত করা হবে।
শকুন এক প্রকার পাখি। এটি মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে থাকে। সাধারণত এরা অসুস্থ ও মৃতপ্রায় প্রাণীর চারিদিকে উড়তে থাকে এবং প্রাণীটির মরার জন্য অপেক্ষা করে। শকুনের গলা, ঘাড় ও মাথায় কোনো পালক থাকে না। প্রশস্ত ডানায় ভর করে আকাশে ওড়ে। মহীরুহবলে পরিচিত বট, পাকুড়, অশ্বত্থ, ডুমুর প্রভৃতি বিশালাকার গাছে সাধারণত লোকচুর অন্তরালে শকুন বাসা বাঁধে। সাধারণত গুহায়, গাছের কোটরে বা পর্বতের চূড়ায় ১-৩টি সাদা বা ফ্যাকাশে ডিম পাড়ে। কিন্তু এই শকুনটি ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তির পথে।
জানা গেছে, ১৯৭০ সালের শকুন শুমারিতে দেখা গিয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে ৫০ হাজারের মত শকুন ছিল। বাংলাদেশে ২০০৮-০৯ সালে চালানো শুমারিতে দেখা যায় শকুনের সংখ্যা নেমে আসে ১৯৭২টিতে। এর কয়েক বছর পর ২০১১-১২ সালে শকুনের সংখ্যা আরও কমে দাঁড়ায় ৮১৬টিতে। আর সবশেষ ২০১৪ সালে শকুন কমতে কমতে দাঁড়ায় মাত্র ২৬০টিতে। অথচ এক সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই দেখা মিলতো বৃহদাকার এই পাখিটির। কিন্তু এখন সিলেট এবং সুন্দরবন এলাকাতেই উলেযোগ্য সংখ্যায় শকুনের দেখা মেলে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৮ প্রজাতির শকুন দেখা যায়।
প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা পালনকারী শকুনের অস্তিত্ব আজ বিপন্নপ্রায়। প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলা হয় শকুনকে। প্রকৃতির সমস্ত বাসি, পচা, দুর্গন্ধযুক্ত মরা প্রাণীর দেহ ওরাই খেয়ে পরিষ্কার করে ফেলে। রোগমুক্ত রাখে মানুষ এবং সমাজকে। বিভিন্ন রোগের জীবাণু যেমন অ্যানথ্রাক্স বিভিন্ন রোগের সংক্রমণসহ অন্তত ৪০টি রোগের ঝুঁকি থেকে মানুষ ও পশু-পাখিকে রক্ষা করে। শকুন আকাশে উড়ে বেড়ানোর সময় নিচের সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পায় বলে প্রাণীর মরদেহ দেখে নেমে আসে। একটা সময় সুন্দরবন সংলগ্ন পাথরঘাটার উপকূলেও দেখা যেত শকুন। গত কয়েক বছর ধরে একেবারেই শূন্যের কোটায়।
পরিবেশকর্মী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, অতিমাত্রায় কৃষিতে কীটনাশক, পোকামাকড় জাতীয় জীবজন্তু মারার জন্য বিষ মিশ্রিত খাবার প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড় শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। এছাড়াও মানুষের অত্যাচার তো আছেই। জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সুন্দর পরিবেশ এবং বন সংরক্ষণ দরকার। এ জন্য স্থানীয় সরকার, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা বাড়ানো দরকার।