1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল মিটফোর্ডে নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মোংলায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত ঝালকাঠিতে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ১ মিডফোর্ডে হত্যাকান্ড ধর্ষন হত্যা চাঁদাবাজ প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল চাঁদপুর জেলা পুলিশ কর্তৃক ২৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ০৩ জন ও পরোয়ানাভুক্ত ০১ জন আসামী গ্রেফতার ‎সাউদার্ন নিট ওয়্যারে শ্রমিক বিক্ষোভ: পুনর্বহাল ও পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল কালিয়াকৈর শরীয়তপুরের ভেদেরগঞ্জ উপজেলা সখিপুর থানাধীন। চর কুমারিয়া থেকে ২০০ পিস ইয়াবাসহ দুইজন গ্রেফতার মুলাদীতে সোহাগ হত্যার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ জনগণ হিলিতে মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে চোর সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে হত্যা মাদারীপুরে ইজিবাইকে ওড়না পেঁ চিয়ে কলেজছাত্রীর রহস্যজনক মৃ’ত্যু

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন: সম্ভাবনা ও সংশয়

মোঃ ফিরোজ কবির আকন্দ
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে
আধুনিক গণতন্ত্রে প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতির অন্যতম বিকল্প হিসেবে “পিআর” বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (Proportional Representation) আজকাল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গণতন্ত্র বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও গৃহীত শাসনব্যবস্থা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা জোরালোভাবে শুরু হয় ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর। টক শো, সেমিনার এবং রাজনৈতিক বক্তব্যে এই পদ্ধতি এখন ঘন ঘন উঠে আসছে। আমরাও সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই পদ্ধতি নিয়ে ভাবি ও আলোচনা করি।
পিআর পদ্ধতির সুবিধাসমূহ:
পিআর পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—এই পদ্ধতিতে আইনসভায় সমাজের সকল শ্রেণি, গোষ্ঠী ও মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু—সবাই মত প্রকাশ ও অধিকার রক্ষায় সুযোগ পায়। কালো টাকা ও মাসল পাওয়ারের দৌরাত্ম্য কমে, নির্বাচনী ব্যয় হ্রাস পায় এবং নির্বাচনে অপরাধী-প্রবণ প্রার্থীদের প্রভাব কমে আসার সম্ভাবনা থাকে।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ইতোমধ্যে নারী আসনের ক্ষেত্রে আংশিকভাবে পিআর পদ্ধতির প্রয়োগ হয়েছে। এ অভিজ্ঞতা আমাদের নতুন কিছু ভাবতে উৎসাহ দেয়।
সমস্যা ও সংশয়:
তবে বাস্তবতা ভিন্ন। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও জনগণ মূলত ভোট দেয় একজন লোককে—যিনি এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে মানুষ ভোট দেয় দলের প্রতীককে, কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীকে নয়। ফলে ভোটার জানেন না, তার ভোটে আসলে কে সংসদ সদস্য হবেন। রাজনৈতিক দলই পরে ঠিক করবে কে হবে প্রতিনিধি। এতে দলীয় প্রধান বা নেতৃত্বের হাতে অসীম ক্ষমতা চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা রাজনৈতিক স্বচ্ছতার পরিপন্থী।
এছাড়া জনগণের অভিযোগ রয়েছে, মনোনয়ন পেতে হলে আদর্শ ও জনপ্রিয়তার চেয়ে অর্থবিত্ত, প্রভাব ও ‘দলের কাছের লোক’ হওয়াই বেশি কার্যকর। ফলে পিআর পদ্ধতিতে প্রার্থী নির্বাচনে বিত্তশালীদের একচেটিয়া প্রভাব পড়তে পারে। এতে গণতন্ত্রের মূল রূপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেমন বলা হয়— “ভোট দেবে সদ্বীপে, নেতা হবে মালদ্বীপে”—অর্থাৎ এলাকার ভোটে এলাকার বাইরে কেউ নির্বাচিত হতে পারে।
আরও আশঙ্কার বিষয় হলো—দল যদি দলীয় নমিনেশন বণ্টনে স্বচ্ছতা না বজায় রাখে, তাহলে ব্ল্যাক মানি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সামাজিক বৈষম্য আরও বাড়তে পারে। জনগণ তাদের নেতাকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চায়, দূরের একজন ‘দলীয়’ এমপি নয়। এতে গণমানুষের সঙ্গে নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরি হয়, যা গণতন্ত্রের আত্মাকে ক্ষুণ্ণ করে।
একটি বিকল্প ভাবনা:
এই প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ মনে করেন, ১৯০৯ সালের লর্ড মর্লে-মিন্টো আইন আদলে একটি উন্নত কাঠামো হতে পারে। যেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছিল। এতে কথিত “ভোট ব্যাংক রাজনীতি”র অবসান ঘটানো সম্ভব হতে পারে।
এছাড়া জাতীয় সংসদের পাশাপাশি ছাত্র সংসদ, সিনেট (উচ্চকক্ষ), উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ইত্যাদিতে পরীক্ষামূলকভাবে পিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতে করে জনগণ তুলনা করার সুযোগ পাবে—কোন পদ্ধতি অধিক কার্যকর।
বর্তমানে অনেকে প্রস্তাব করছেন—জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির সমন্বয় ঘটালে রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে এবং পদ্ধতির সুফল-অসুবিধা পর্যালোচনা করা সম্ভব হবে।
শেষ কথা:
আমরা এমন এক সমাজে বসবাস করি যেখানে সত্য বলা অনেক সময় বিপজ্জনক হয়ে পড়ে, মুখ আর মুখোশ আলাদা করা কঠিন হয়ে যায়। নেতার মুখে হাসি থাকলেও মুখোশের পেছনে লোভ লুকিয়ে থাকে। আমরা দেখেছি সাংবাদিকতার কলমও কখনো কখনো নিলামে উঠে যায়, এবং গণচেতনাও ‘আয়নাবাজি’র মোড়কে ঢাকা পড়ে যায়।
ধর্ম, রাজনীতি ও মিডিয়ার অদ্ভুত এক প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বর্তমান বাস্তবতায়। এই প্রেক্ষাপটে রাজনীতির সংস্কার প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী। পিআর পদ্ধতি কি সেই সংস্কারের পথ দেখাবে, না কি গণতন্ত্রকে আরও দূরে সরিয়ে নেবে—তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা ও নৈতিকতার ওপর।
গণতন্ত্র শুধু পদ্ধতি নয়—এটি একটি সংস্কৃতি, একটি মূল্যবোধ। আমাদের উচিত, যে কোনো পদ্ধতির আগে নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও গণমানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com