গরু চুরি করে জবাই, তারপর মাংস সাপ্লাই দেয়াই ছিল তার পেশা। নিজের ঘরের ভেতর বানিয়েছেন মিনি কসাই খানা। রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য ফেলার জন্য আছে ড্রেনেজ সিস্টেমও। ঘরের ভিতরেই গোস্ত মজুদের জন্য রয়েছে ডীপ-ফ্রিজ। গরু চুরি ও বিভিন্ন কসাইদের কাছে গোস্ত সাপ্লাই দিতেন সকলের অগোচরে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ওয়াদুদ মিয়ার। অবশেষে তাকে আটক করেছে পুলিশ। ধরা পরার আগ পর্যন্ত অন্তত শতাধিক গরু চুরির রেকর্ড করেছেন তিনি। ওয়াদুদ সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মজির মিয়ার ছেলে।
মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের রাজনগর থানার পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন ওয়াদুদ। বুধবার ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ও উত্তরভাগ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শীত মৌসুমে গরু চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেন। তৎপর হয়ে উঠে পুলিশ। অধিকাংশ গরু চুরির রেকর্ড পুলিশের কাছে না থাকলেও সাধারণ মানুষরা নিজের মতো করে খোঁজাখোঁজি ও মেম্বার চেয়ারম্যানদের জানিয়ে রাখতেন। গত ৪/৫ দিন আগে উপজেলার মুন্সিবাজারের করিমপুর চা বাগানের অনন্ত তেলির একটি বাছুর ছাড়া গাভী চুরি হয়। তিনি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখোঁজি করছিলেন। এদিকে গত ২দিন আগে রাজনগরের চেলারচক এলাকার কয়েকজন শ্রমিক পার্শ্ববর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আনারস বাগানে কাজ করতে যান। তারা ওই বাগানে পা ও মুখ বাধা একটি গাভী দেখতে পেয়ে নিয়ে এসে উত্তরভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের জিম্মায় রাখেন। গাভীটির মালিক না পাওয়ায় এলাকায় মাইকিং করা হয়।এদিকে খবর পেয়ে অনন্ত তেলি গিয়ে দেখেন গাভীটি তার। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে গাভীর বাছুর নিয়ে গেলে বাচ্চাটি দুধ খাওয়া শুরু করে। এতে তার মালিকানা নিশ্চিত হওয়া গেলেও চুর কে তা পাওয়া যাচ্ছিল না।
মুন্সিবাজারের করিমপুরের আওয়াল মিয়াসহ কয়েকজনেরও গরু চুরি হয়েছে অতিসম্প্রতি। তারা চুর খোঁজার জন্য ওই এলাকায় যান। গিয়ে দেখেন মির্জাপুরে ওয়াদুদ মিয়ার বাড়ির পাশে অর্ধশতরও বেশি গরুর মাথা ও হাড়গোড় দেখা যায়। এছাড়াও আনারস বাগানের বিভিন্ন এলাকায় গরুর মাথা ও হাড় পড়ে রয়েছে। পরে তারা রাজনগর থানার পুলিশকে খবর দিলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) শওকত মাসুদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ফেঞ্চুগঞ্জ থানার সহায়তায় মির্জাপুর গ্রামের মজির মিয়ার ছেলে ওয়াদুদ মিয়া (৩২) ও তার পাশের বাড়ির বোনের জামাই মাসুদ মিয়ার ছেলে কবির মিয়া (৫৫) কে মঙ্গলবার বিকালে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এসময় তার ঘরের ফ্রিজে রাখা প্রায় ৫০ কেজি গোস্ত, চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজি অটোরিক্স, বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তার বাড়ির পাশ থেকে প্রায় ৫০টি গরুর মাথার কঙ্কাল পাওয়া যায়।