তজুমদ্দিন উপজেলার দেওয়ানপুর নিবাসী মোঃ আব্বাস উদ্দিনের দুই মেয়ে এবং এক ছেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার উত্তর বাসস্ট্যান্ডে মাদ্রাসাতুত তাকওয়ায় আবাসিক থেকে পড়ালেখা করে। মাদ্রাসার বালিকা শাখা থেকে মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিনের মারিয়া (৯) নামের শিশু শিক্ষার্থী উধাও হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিশুর মা মোছাম্মৎ রোকেয়া নিজে বাদী হয়ে বোরহানউদ্দিন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছেন।
মাদ্রাসাতু্ত তাকওয়া বালিকা শাখার মুহতামিমের ভাষ্যমতে, গত শুক্রবার সকাল ১২.০০ টা থেকে দুপুর ১.০০ টার মধ্যে একই মাদ্রাসার আরেক শ্রেণীর শিক্ষার্থী মারিয়াকে সাবান ক্রয় করার জন্য দোকানে পাঠায়। মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার পরই মারিয়া আর মাদ্রাসায় ফিরে আসেনি। মারিয়া ফিরে না আসার বিষয়টি মুঠোফোনে মাদ্রাসা থেকে মহতামিমকে ইনফরমেশন করা হয় আনুমানিক বিকেল তিনটার সময়। এবং বিকেলেই মারিয়ার পরিবারকে নিখোঁজের সংবাদটি মুঠোফোনে জানানো হয়। এরপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারিয়ার নিখোঁজের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে মারিয়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপহরণকারী হিসেবে মারিয়াকে ফিরিয়ে ডিয়ার আশ্বাসে বিশ হাজার টাকা দাবি করেন। অপহরণকারী হিসেবে মোবাইল নাম্বারটি ট্র্যাকিং করা হলে বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশ জানান, যে নাম্বার থেকে ফোন করে অপহরণের দাবীকৃত টাকা চাওয়া হয়েছে ওই নাম্বারটি স্বত্বাধিকারীর ঠিকানা রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার একটি অজপাড়া গ্রামের। বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশ ধারণা করছেন এটি ছেচড়া লোকের কাজ হতে পারে। আসলেই এই নাম্বারটি অপহরণকারীর সাথে সন্দেহ জনক ভাবে সম্পৃক্ত নাও হতে পারে। থানা পুলিশ প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, মারিয়াকে উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
একজন সংবাদকর্মী মন্তব্য করেন, যেহেতু দিনটি ছিল শুক্রবার তাই ১২.০০ টা থেকে ১.০০ টার আগ পর্যন্ত এই সময়টুকু এলাকায় থমথমে অবস্থায় বিরাজ করে, মোটামুটি নির্জন বললেও চলে । উক্ত সময়ে শ্রেণী শিক্ষকের অনুপস্থিতি এবং মাদ্রাসা মুহতামিমের অনুপস্থিতির মধ্যেই মারিয়ার মাদ্রাসার ক্যাম্পাস ত্যাগ করা কতটুকু নিরাপদ ছিলো? এখানে বালিকা বিভাগের শিক্ষকদের ভূমিকাই কি? আর মারিয়া উধাও হয় ১২.০০ টা থেকে ১.০০ টার মধ্যে কিন্তু এই খবর মুহতামিম এবং পরিবার এর কাছে কেন দুপুরের পর পৌঁছাবে? আবার যে নাম্বার থেকে অপহরণকারী হিসেবে বিশ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল ওই নাম্বারের স্বত্বাধিকারীর ঠিকানা বের করা সত্ত্বেও গ্রেপ্তার করতে পুলিশ প্রশাসন সময় নিচ্ছেন কেন? এ বিষয়গুলো জনমনে কাকতালীয়ভাবে প্রশ্ন জাগাচ্ছে।
এদিকে মাদ্রাসার আশেপাশের সকল সিসি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসার মুহতামিম। একটি ফুটেজে একজন মহিলা শিশু বাচ্চা নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেলেও তা ক্লিয়ার ভাবে মারিয়াকে সনাক্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়। সিসি ক্যামেরার কোন ফুটেজেই মারিয়ার অপহরণ বা ঘুমের বিষয় নিশ্চিত করা যায়নি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং পরিবারের থেকে জানান, উক্ত মাদ্রাসায় মারিয়ার বড় বোন ফাতেমা এবং তার ভাই বালক শাখায় আবাসিক থেকে পড়ালেখা করছে। মারিয়া
বয়স কম হলেও মেধায় খুব প্রখর এবং খুব বুদ্ধি জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষার্থী।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার মডেল মসজিদের ১০০ গজ পূর্ব পাশে অবস্থিত আততাকওয়া মাদ্রাসার মহিলা ক্যাম্পাস এবং তার পেছনেই পুরুষের ক্যাম্পাস । মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নেই দারোয়ান এবং সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা। অবাধে যে কোন শিক্ষার্থী মাদ্রাসা ক্যাম্পাস থেকে বাজারে যাতায়াত করতে পারে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনায় এবং ঢিলেঢালা সিকিউরিটির কারণে এহেন কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হওয়াটা বাচনীয়। তবে মারিয়াকে উদ্ধারের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ও চেষ্টা অকল্পনীয় লক্ষ্য করা গেছে।
বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সর্বত্রই মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদের নিউজ হিসেবে কাভার করা হয়েছে। সর্বপরি মারিয়াকে ফিরে পেতে তার পরিবারের রাত দিন খোঁজাখুঁজির মধ্যেই সময় কাটছে। মারিয়ার পিতা নিরুপায় হয়ে সকলের কাছে মারিয়ার জন্য দোয়া প্রার্থনা করছেন যেন আল্লাহ সুস্থভাবে থাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করে দেন।
মারিয়ার পিতা মোঃ আব্বাস উদ্দিন জানিয়েছেন তার সাথে এলাকার কারো সাথেই পূর্ব শত্রুতামূলক কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে মারিয়াকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন এবং সরকারের কাছে তার শিশু সন্তানের প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন।
এদিকে বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ সাংবাদিকদের জানান, “ মারিয়ার মা বাদী হয়ে বোরহানউদ্দিন থানায় একটি জিডি দায়ের করেছেন। জিডি মূলে মারিয়াকে উদ্ধারের সকল প্রকার চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা মারিয়াকে উদ্ধারের কাজ গুরুত্ব দিয়ে সকল পদক্ষেপে স্টেপ বাই স্টেপ আগাচ্ছি। পাশাপাশি বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সকল সাংবাদিক, মারিয়ার পরিবার এবং মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।