1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাগেরহাটে নাতনীকে যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করায় বৃদ্ধা নানীকে হত্যা পীরগঞ্জে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে বকশিগঞ্জ একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ উপজেলা হবে- ইউএনও মাসুদ রানা হরিপুরে ৫৪ জন গ্রামপুলিশদের জন্য বাইসাইকেল ও পোশাক বিতরণ পরিবেশ দূষণ রোধে পাবনায় দুই কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ কাঁঠালিয়ায় এনজিও কর্মীকে কুপিয়ে পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ সুপারসহ ৪ কর্মকর্তার নামের মামলার আবেদন বিএনপি নেত্রীর সাবেক দুই এমপিসহ আ.লীগের ২৩১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রাকসুর তফসিল ঘোষণার দাবিতে রাবি ছাত্রশিবিরের ঘেরাও কর্মসূচি

শিশুদের ট্রমা বন্ধু হয়ে পাশে থাকুন

জনাব মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম বাপ্পী | দেশ বুলেটিন প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি বিমান (বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান) আছড়ে পড়ে স্কুলের হায়দার আলী ভবনে। সঙ্গে সঙ্গে ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় অনেক শিক্ষার্থী নিহত হয়। পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে আরও অনেকে। যারা নিহত হয়েছে তাদের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। সন্তান হারানোর এই বেদনা তাদের আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। যেসব শিশু আগুনে পোড়া ক্ষত ছোট্ট শরীর নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে–শরীরের পাশাপাশি তাদের মনোজগতে তৈরি হয়েছে বিরাট ক্ষত। আহত অনেকেই হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে কিন্তু মানসিক ট্রমা  থেকে যাবে অনেকদিন।

এত বড় দুর্ঘটনার পর ফিজিক্যাল সেফটি অর্থাৎ তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দরকার সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড; যেটিকে সংক্ষেপে বলা হয় পিএফএ। এটি মানবিক একটি সাপোর্টিভ বিষয়। এখন প্রথম কাজ হলো আহত শিশুরা যদি কিছু বলতে চায় তাহলে আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনব, কিন্তু তাদের কিছু বলতে চাপ দেব না। তারপরে তার কী প্রয়োজন তা পূরণ করব।
সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে, একটি শিশু খালি গায়ে দৌড়াচ্ছে, কেউ তার পাশে দাঁড়াচ্ছে না। বড় কেউ এসে শিশুটিকে পরিষ্কার কোনো কাপড় দিয়ে ধরতে পারত। সেটি কেউ করেনি। ছাত্রছাত্রীরা যারা বাইরে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখছে তাদের কাছেও এটি একটি সাইকোলজিক্যাল ট্রমা। এমন ঘটনা হলে সবাই প্রিয়জনকে খোঁজে আর শিশুরা তো অবশ্যই বাবা-মাকে খুঁজবে। অথচ তারা পাশে কাউকে পায়নি। তাদের ট্রমায় পড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

আবার এই দুর্ঘটনায় মেহেরীন চৌধুরী নামের একজন শিক্ষক মায়ের মতো শিশু শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে দাঁড়িয়ে গেছেন। নিজের শরীর ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার পরেও তিনি শিক্ষার্থীদের বলেছেন– ছুট, তোরা ছুট, আমি আছি। তিনি হতবিহবল শিশুদের সাহস দিয়েছেন। ওই সময়ে অনেক শিশু মায়ের ভূমিকায় এমন একজন শিক্ষককে পেয়েছে। এটিই হচ্ছে ফার্স্ট সাইকোলজিক্যাল এইড। এরপর হচ্ছে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, পরেরটা চিকিৎসকদের দায়িত্ব। এই ঘটনার পর দেখা গেছে, চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য রিকশা, ভ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দেখা গেছে, মেট্রো রেলে তাদের খুব দ্রুত আনা হয়েছে।
কেউ কেউ দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে, যা নিন্দনীয়। যারা উদ্যোগ নিয়েছে তাদের আমরা বাহবা দেব, প্রশংসিত করব। হাসপাতালে শিশুদের দেখতে অনেক লোক ঢুকে পড়েছে। এটি খুব বিপজ্জনক। এতে শিশুদের সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। তাদের সারা শরীর পুড়ে গেছে, স্কিন নেই। যারা হাসপাতালে ভর্তি আছে তাদের পাশে অন্যদের ঢুকতে না দিয়ে স্বজনদের পাশে থাকতে দিতে হবে। তাহলে পরবর্তী সময়ে তাদের যে বেশি মানসিক বিপর্যয় হওয়ার শঙ্কা সেটি আমরা প্রতিরোধ করতে পারব।

এমন দুর্ঘটনার পর অনেক শিশুই কথা বলতে পারছে না। নির্বাক, হতভম্ব হয়ে আছে। এটিকে বলা হয় একিউট এক্সিক রিঅ্যাকশন বা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। এটি যদি আমরা ঠিকভাবে হ্যান্ডল করতে পারি তাহলে তাদের পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার প্রতিরোধ করতে পারব। তাৎক্ষণিক এই প্রতিক্রিয়া যদি তাদের ২৮ দিন বজায় থাকে তাহলে সেটিকে একিউট এক্সিক রিঅ্যাকশন বলা যায়। যদি এর বেশি স্থায়ী হয় তাহলে সেটি পোস্ট ট্রমাটিক ডিজঅর্ডার হবে। এর মানে হচ্ছে তার মননে গেঁথে থাকবে। থিউরি হচ্ছে, যে দুর্ঘটনা সে চোখে দেখেছে বা নিজের শিকার হয়েছে তা মস্তিষ্কে গেঁথে থাকবে। আমাদের মস্তিষ্কে কিছু কেমিক্যাল পদার্থ আছে– একটি ঋণাত্মক, একটি ধনাত্মক। যখন ট্রমাটি হয়, তখন হঠাৎ করে ভারসাম্য নষ্ট হয়। তখন সে যে দৃশ্যটি দেখছে তা তার মস্তিষ্কে গেঁথে থাকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত। যারা মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতা দেখেছেন, অঙ্গহানি ঘটেছে–২৭ বছর পরেও ৩৩ শতাংশ মানুষের পোস্ট ট্রমাটিক ডিজঅর্ডার ছিল। ওই দৃশ্য মাথায় নিয়ে পরবর্তী সময়ে তারা নানা রোগেশোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। যে বাচ্চাগুলো এই দুর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে গেছে, আর আমরা যারা দেখেছি সবাই সাইকোলজিক্যালি ট্রমাটাইজ হয়ে গেছি।
যারা নিহত হয়েছে, তাদের পরিবারের ক্ষতি অপূরণীয়। যারা বেঁচে আছে তাদের যাতে আর ব্যাপক ক্ষতি না হয় সেটি প্রতিরোধ করতে হবে।
পরবর্তী জীবনে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা দুর্ঘটনার শিকার শিশুদের পোস্ট ট্রমা, ডিপ্রেশন হতে পারে। নানারকম নেতিবাচক বিষয় স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে এখন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকমতো পরিচর্যা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে প্রতিরোধমূলক পোশাক পরিয়ে তাদের পাশে নিজের বাবা-মা কিংবা ভাই-বোন, যিনি শক্ত থাকতে পারবেন পাশে থাকাটা জরুরি।
এই দুর্ঘটনায় দেখলাম, একটি বন্ধু আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার বন্ধুকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। উদ্ধারকারীরা বলছে–লাভ নাই, ও তো মরে গেছে। বন্ধুটি বলছে, তাতে কী হয়েছে, ও বলেছে আমি জানি তুই আসবি। এ ঘটনায় বন্ধুত্বের উৎকর্ষের একটা প্রমাণ আমরা দেখলাম। ভবিষ্যতে এটি একটি উদাহরণ হবে, বন্ধু এমনই হওয়া উচিত।
যেকোনো ঘটনা থেকে ভবিষ্যতের শিক্ষা নিতে হয়। এই দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি পাবে; তারা যা নিয়ে এখন আন্দোলন করছে–তাদের চাহিদা কী, তাদের দাবিগুলো পূরণ করার মাধ্যমে। সেটি মুখের ভাষায় নয়, যথার্থভাবে পূরণ করতে হবে। সবাইকে সতর্ক করে বলছি, এ দুর্ঘটনায় অনেক শিশুর পোস্ট ট্রমাটিক ডিজঅর্ডার হবে। কারণ শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এখন দরকার তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করা, এখন যারা চিকিৎসাধীন তাদের পাশে স্বজনদের দাঁড়াতে দেওয়া, সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা।
যে পরিবারের একটি সন্তান মারা গেছে বা আহত হয়েছে তাদের পাশে স্বজনদের সার্বক্ষণিক থাকতে হবে। পরিবারগুলোকে মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে। সবাইকে অনেক বেশি মানবিক হতে হবে। যেসব শিশু অনেক ভয়-ভীতি নিয়ে আতঙ্কে থাকবে তাদের জন্য মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার উদ্যোগ নিতে হবে।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com