পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের আড়ালে পৈত্রিক জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হাওলাদার ফিরোজ্জামানের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়টি বহু বছর ধরে বন্ধ থাকলেও তা ঘিরে জমি দখলের বিরোধে উত্তেজনা বিরাজ করছে এলাকায়। গত ২৬ জুলাই দুমকী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন দক্ষিণ চরবয়রা গ্রামের বাসিন্দা মো. মুছা হাওলাদার। তিনি দাবি করেন, ২০০৬ সালে ফিরোজ্জামান তাঁর বাবা-মায়ের নামে হনুফা নূরআলী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বিদ্যালয়টি স্থাপনের তিন বছর পর, ২০০৯ সালে জমি ক্রয় করা হয়। অভিযোগকারীর ভাষ্য অনুযায়ী, এসএ ৭৭ খতিয়ানের ৩১৯৭ নম্বর দাগে ৫ জন ওয়ারিশের কাছ থেকে মোট ২০ শতাংশ জমি কিনেছেন ফিরোজ্জামানের ভাই আবুল বাসার। তবে বাস্তবে প্রায় ৩৩ শতাংশ জমি দখলে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অভিযোগকারীদের বাকি ১৩ শতাংশ জমিও। মুছা হাওলাদার বলেন, “আমাদের বসতঘর ভেঙে টিনসেড বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে আমরা নিজেদের অংশে আবার বসবাস করছি, তবে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকির মধ্যে আছি।” স্থানীয় বাসিন্দা মো. লতিফ মৃধা ও হারুন মৃধা বলেন, প্রায় ৫ বছর ধরে বিদ্যালয়টি বন্ধ। সেখানে কোনো শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী নেই। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাকের আলী বাবুলও জানান, “বিদ্যালয়ে এক বছর ধরে কোনো শিক্ষা কার্যক্রম চলছে না।” মুছা হাওলাদার আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে আমাদের হয়রানি করা হয়েছে। এমনকি জমি বিক্রেতা আবদুল মজিদ হাওলাদারকেও থানায় নিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, “আমরা বৈধভাবে জমি কিনে বিদ্যালয় স্থাপন করেছি। কিন্তু অভিযোগকারী পক্ষ ভয়ভীতি ও বাধার কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “তারা বিদ্যালয়ের জমির ওপর ঘর তুলে বসবাস করছে। জমি ফেরত পেতে আমরা আদালতে মামলা করেছি।” এ বিষয়ে যুবলীগ সভাপতি হাওলাদার ফিরোজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে সালিশকারী হিসেবে দায়িত্বে থাকা রফিকুল ইসলাম মৃধা বলেন, “৩১৯৭ দাগে ২০ শতাংশ জমি ফিরোজ্জামান গং-এর ক্রয়কৃত এবং বাকি ১৩ শতাংশ সোবহান হাওলাদার গং-এর অংশ।” তবে মুছা হাওলাদার বলেন, সালিশ বৈঠকে যে রোয়েদাদ দেখানো হয়েছে, সেটি জাল। ২০১১ সালের ৪ মার্চের ওই রোয়েদাদ প্রসঙ্গে সালিশ আবুল কাশেম মৃধা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি সেটি লেখেননি। এ ছাড়া সেখানে কয়েকটি স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগকারী পক্ষ জানায়, ১৬ জুলাই কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ফিরোজ্জামান গং পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যা অভিযোগ তোলে, যার প্রতিবাদও তাঁরা করেছেন।