লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্থানীয় দুই নেতাকে জড়িয়ে চাঁদার দাবিতে মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধের চলমান কাজ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ এনে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। শুক্রবার (২৫ জুলাই ) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়ন সভাপতি মাস্টার লোকমান হোসেন ও একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এ প্রতিক্রিয়া জানান। উপজেলার হাজিরহাট বাজারস্থ একটি চাইনিজ এন্ড রেষ্টুরেন্টে ঘন্টাব্যপী একান্ত আলাপকালে তারা বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শবাদ ও সুশৃঙ্খল সংগঠন। এই সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী কোনো প্রকার রাষ্ট্র বা সমাজবিরোধী কর্মকান্ড এমনকি চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। প্রকাশিত ওই সংবাদের বিষয়ে ক্ষুব্ধপ্রতিক্রিয়া ভুক্তভোগীরা জানান, লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের বাসিন্দা হারুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি “বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) “থেকে উপজেলার মেঘনা নদীর নবীগঞ্জ হতে পাটারিরহাট এলাকা পর্যন্ত অভ্যন্তরীন নৌ-ঘাট হিসেবে ইজারা নেন। ইজারাদার হারুনুর রশিদ জেলা শহরের বাসিন্দা, ও জনবল সংকটের কারণ জানালে ভুক্তভোগী মাষ্টার লোকমান হোসেন ও আনোয়ার হোসেন সম্মতি জানিয়ে মুল ইজারাদারের বিপরীতে কমিশন আদায়ের দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী ইজারার স্বপক্ষে সকল কাগজপত্রাদি প্রয়োজনীয় সকল দপ্তরে জমাও দেন তারা। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার মাতব্বরহাট নৌঘাটে মেঘনা নদীর চ্যানেল ব্যবহার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়েষ্টটার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির তীর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক নির্মানে বালু ও পাথার পরিবহনকারী একাধিক কার্গোজাহাজ ও বাল্কহেডের ব্যবসায়ী জনৈক ইউসুফের নিযুক্ত মো. সাহাদাতের সঙ্গে ইজারার কাগজপত্র ও কমিশন আদায়ের বিষয়ে আলোচনা করতে যান ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন। ওই সময় স্থানীয় দুই যুবকের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হয় তার। এতে সামান্য সময়ের জন্য পল্টুনে ব্লক উঠানো বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। ভুক্তভোগী জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ইজারাদারের দায়িত্বশীল হিসেবে আমি কার্গো জাহাজ ও বাল্কহেড দিয়ে বালু ও পাথার পরিবহনকারী (ব্যবসায়ী) ইউসুফের নিযুক্ত ব্যক্তির সাথে ইজারার কমিশনের বিষয়ে কথা বলতে যাই। এ সময় রাজু ও আনোয়ার নামে স্থানীয় দুই যুবক এসে হট্টগোল সৃষ্টি করে। তারা ওই ঘাট থেকে কোনো ধরনের কমিশন আদায় করতে দেওয়া হবেনা, এবং যারা কমিশন আদায় করতে চাইবে তাদেরকে খুন করা হবে বলেও প্রকাশ্য হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে পরে বসে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে সিদ্ধান্তে সেখান থেকে আমি চলে আসি। ভুক্তভোগী আরও বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং তারা ওখানে দীর্ঘদিন ধরে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ করে আসছেন। কিন্তু সিসি ব্লক নির্মাণে নদীপথ ও মাতব্বরহাট নৌঘাট ব্যবহার করে কার্গোজাহাজ ও বাল্কহেড দিয়ে সেখানে বালু এবং পাথর পরিবহন করছেন ইউসুফ নামে আরেক ব্যক্তি। মুলত ঘাট ইজারাদার হিসেবে ওই ব্যবসায়ীর পরিবহনকৃত কার্গোজাহাজ এবং বাল্কহেড থেকে কমিশন আদায়ের বিষয়ে আমার কথা চলছিল। সেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ করা বা তাদের থেকে চাদা দাবির প্রশ্নই আসেনা বলে জানান তারা। তারা বলেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী একটি আদর্শিক ও সুশৃঙ্খল সংগঠন, রাজনৈতিকভাবে পরাজিত একটি পক্ষ আমাদের প্রাণের সংগঠন এবং আমাদের প্রতি বিরাগভাজন হয়ে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছেন। যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদেরকে আমরা অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে এধরণের অপপ্রচার করলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার কাজ বন্ধ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারের নিযুক্ত অন্তত ১৫জন শ্রমিক জানান, স্থানীয় রাজু ও আনোয়ারের সাথে ইজারা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এক ব্যক্তির তর্কবিতর্কের কারণে ঘন্টাখানেক তারা পল্টুনে ব্লক লোড করা বন্ধ রাখেন। পরে তারা যথারীতি কাজ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নিযুক্ত কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বি জানান, মাষ্টার লোকমান তাকে ইজারার বিপরীতে সকল কাগজপত্র তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিক বৈধতা রয়েছে। ইজারাদারের পক্ষে মাষ্টার লোকমান কমিশন পেতে কোনো ধরনের বাধা নেই। এবিষয়ে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির পক্ষে ম্যানেজার বোরহান উদ্দিন মন্তব্য করতে রাজি হননি। ইজারাদার হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমি মাতব্বরহাট ঘাটের মুল ইজারাদার। জনবল, সময় এবং ব্যস্ততার কারণে লোকমান মাস্টারকে ইজারা আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছি। ইজারাদারের পক্ষে এখন হতে ওই ঘাট থেকে তিনিই টোল আদায় করবেন। এবিষয়ে উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল খায়ের বলেন, জনগণের মাঝে জামায়াতে ইসলামী দিন দিন জনপ্রিয় সংগঠনে পরিণত হওয়ায় একদল কুচক্রী মহল দলটির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। অপপ্রচার বন্ধ না হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানান এই নেতা।