আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সোমবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, গুজব প্রতিরোধ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম সংক্রান্ত একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচন কেন্দ্রিক বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে, যা অক্টোবর ও নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এছাড়া, নির্বাচনী নিরাপত্তার অংশ হিসেবে প্রায় ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সেনা সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি জানান, সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই ৫ আগস্ট থেকে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের কাছে বিচারিক ক্ষমতাও রয়েছে। গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে সরকার একটি “ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার” গঠনের পরিকল্পনা করেছে। এই কেন্দ্রটি গুজব দ্রুত শনাক্ত ও প্রতিরোধে কাজ করবে এবং জনগণের কাছে যাচাই করা তথ্য পৌঁছে দেবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাৎক্ষণিক ও গঠনমূলক পদক্ষেপগুলোর প্রচারেও এটি সহায়ক হবে। নতুন গঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমান্ড কাঠামোর অধীনে একটি মিডিয়া উইং গঠনের প্রস্তাবও আলোচনায় এসেছে, যা নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং এবং জরুরি তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে জনগণকে আপডেট রাখতে কাজ করবে। সংবাদ সংগ্রহে ইউটিউবার ও অনানুষ্ঠানিক কনটেন্ট নির্মাতাদের দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, “অনেকে সংবাদ পরিবেশনের সময় পেশাদারিত্ব বজায় রাখছেন না, যা প্রকৃত সাংবাদিকদের কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এ প্রবণতা চলতে থাকলে তাদের জন্য আলাদা নির্দেশনা নির্ধারণ করতে হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা বা দুর্যোগকালীন সময়ে সংবাদ সংগ্রহের মৌলিক নীতিমালা জানা ও মানা অত্যন্ত জরুরি। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সম্ভাব্য সংঘাতপ্রবণ ‘হটস্পট’ অঞ্চল চিহ্নিত করে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা যায়। এছাড়া, নির্বাচনপূর্ব প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস নিয়েও আলোচনা হয়। প্রেস সচিব জানান, “ব্যাপক রদবদল নয়, বরং প্রয়োজনীয় জায়গাতেই সীমিত আকারে এই পরিবর্তন আনা হবে।” দিনের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় উঠে আসে সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগ, রাজনৈতিক সংলাপ এবং ট্যারিফ বিষয়ক বিভিন্ন দিক। সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, “নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার।” একই দিন রাতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল ট্যারিফবিষয়ক আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগ দেবে বলেও জানান তিনি। প্রেস সচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সিভিল প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।