কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ফকিরকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন বিনা অনুমতিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে সরকারি বেতন-ভাতা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি শিক্ষক সমাজ ও সচেতন মহলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের ফকিরকুটি এলাকার বাসিন্দা রানু মিয়া তার ছেলের সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম স্থানীয় ফকিরকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকলেও তিনি প্রতি বছর অল্প সময়ের ছুটি নিয়ে দীর্ঘদিন আমেরিকায় অবস্থান করেন। অভিযোগ রয়েছে, বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও তিনি নিয়মিত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা ভোগ করে আসছেন।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষক হাজিরা খাতায় মর্জিনা বেগম সর্বশেষ স্বাক্ষর করেছেন গত ২ জুন ২০২৫ তারিখে। এরপর থেকে অদ্যাবধি তার উপস্থিতির কোনো সুনির্দিষ্ট রেকর্ড নেই। আরও জানা যায়, তিনি ২০২৪ সালের ২২ মার্চ থেকে চলতি বছরের ১ জুন পর্যন্তও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, “মর্জিনা বেগমের ছুটির বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিস দেখছে। সম্প্রতি অফিস থেকে ২৫ দিনের একটি ছুটির অনুমোদনপত্র পেয়েছি।”
সূত্র মতে, মর্জিনা বেগম প্রথমে তিন মাসের ছুটির আবেদন করেন, যা প্রধান শিক্ষকের এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি। পরে তিনি রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কাছ থেকে ২৪ জুন থেকে ১৮ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ২৫ দিনের ছুটি অনুমোদন নেন। অনুমোদনের কাগজটি বিদ্যালয়ে পৌঁছায় ২৫ জুলাই।
এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাহেদুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “মর্জিনা বেগম ২৫ দিনের ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অসুস্থ স্বামীকে দেখতে গেছেন। নির্ধারিত সময়ের পরে যদি তিনি ছুটি না বাড়ান, তবে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে শিক্ষক সমাজ ও অভিভাবক মহলের অভিযোগ— একজন শিক্ষক নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে বিদেশে অবস্থান করবেন এবং বেতন-ভাতা ভোগ করবেন— এটা যেমন অনৈতিক, তেমনি প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের পথে বড় অন্তরায়।