শামীম আহমেদ, একজন শিক্ষক। তার জীবনের দশটি বছর কেটে গেছে চক-ডাস্টার আর শিক্ষার্থীদের কলরবে। কাওড়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে তার পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের ২রা আগস্ট। ষষ্ঠ গণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন করে পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর সৃষ্ট পদে শাখা শিক্ষক হিসেবে তার যোগদান। কিন্তু এই দশ বছরেও তার নামের পাশে এমপিওভুক্তির সিল পড়েনি।
প্রথম কয়েক বছর কেটেছিল আশায় আশায়। ভাবতেন, “এই বুঝি হয়ে যাবে।” প্রতিটি নতুন অর্থবছর, প্রতিটি নতুন সরকারি ঘোষণার দিকে তাকিয়ে থাকতেন তিনি। সহকর্মীদের এমপিওভুক্তির খবর শুনে তিনি আনন্দ পেতেন, কিন্তু মনের এক কোণে জমে থাকত দীর্ঘশ্বাস। তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়েরা—সবার চোখেমুখে তিনি দেখেছেন একরাশ প্রত্যাশা। তাদের হাসিমুখ দেখার জন্য, তাদের সামান্য আবদার পূরণ করার জন্য তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে গেছেন।
কিন্তু গত দশ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ। জীবনের চাকা যেন হঠাৎ থেমে গেছে। সংসারের নিত্যদিনের খরচ, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ, ওষুধের খরচ—সবকিছুই এখন দুশ্চিন্তার কারণ। টিউশনি আর ধারদেনা করে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছেন। রাতে যখন বিছানায় শুয়ে থাকেন, তখন তার কানে ভাসে শিক্ষার্থীদের কলরব আর দিনের বেলায় দেখতে পান অভাবের রুক্ষ মুখ।
আজ ২রা আগস্ট, ২০২৫। শামীম আহমেদের চাকরি জীবনের দশ বছর পূর্ণ হলো। সহকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা ভালোবাসা জানাচ্ছে। কিন্তু তার মনে আজ কোনো আনন্দ নেই। এই দশ বছরে তিনি অনেক শিক্ষার্থীর জীবন গড়েছেন, তাদের সাফল্যের সাক্ষী হয়েছেন। কিন্তু নিজের জীবনের গল্পটা এখনো অপূর্ণ। তার চোখে এখনো একই স্বপ্ন—একটি এমপিওভুক্তি, একটি সম্মানজনক জীবন। তার অপূর্ণতার গল্পটা যেন হাজারো শামীম আহমেদের গল্প, যারা নীরব কষ্টে স্বপ্ন বুনেন।
শামীম আহমেদের এই গল্পের কোনো শেষ নেই, কারণ তার সংগ্রাম এখনো চলছে। আমরা আশা করি, তার এই প্রতীক্ষার অবসান হবে এবং তার প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি তিনি শিগগিরই পাবেন।