কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ডিভোর্সি এক যুবকের কাছে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে কথিত এক সাংবাদিক ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। শনিবার (৫ অক্টোবর) ভোররাতে ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে আদালতে পাঠায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বলদিয়া ইউনিয়নের মোঃ আব্দুল মান্নানের ছেলে মোঃ ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে প্রায় ৪-৫ মাস আগে তার স্ত্রী মোছাঃ রিতা বেগমের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত সালিশে উপস্থিত ছিলেন কথিত সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আরিফ, মাহবুব, ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাইদুল, ভুট্টুসহ আরও অনেকে। সে সময় এক লক্ষ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়।
চার-পাঁচ মাস পর, ৪ অক্টোবর (শনিবার) বিকেলে ইসমাইল তার বন্ধু আলাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে মোবাইল মেরামতের জন্য ভূরুঙ্গামারী আসলে পূর্বের সালিশে জড়িত কথিত সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মন্ডল ওরফে আরিফসহ কয়েকজন তাদের আটক করে। পরে সালিশের খরচের অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছে ৩০,০০০ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে প্রাণনাশ ও লাশ গুমের হুমকি দিয়ে জহির মার্কেটের একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এমনকি ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছেও ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
পরিবার থেকে থানায় অভিযোগ করলে ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া ঘটনায় অজ্ঞাত আরও কয়েকজন আসামি রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন— চর ভূরুঙ্গামারীর (হুচারবালা) মোঃ আব্দুস সালামের ছেলে কথিত সাংবাদিক মোঃ আনোয়ার হোসেন মন্ডল ওরফে আরিফ, ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ ছাত্রদল সেক্রেটারি ও আব্দুল গফুরের ছেলে মোঃ মুরাদ হাসান রেজুয়ান, সদর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও নুর ইসলামের ছেলে মোঃ শাহরিয়ার শাওন, এবং দেওয়ানের খামারের আলম হোসেনের ছেলে মোঃ লুৎফর রহমান নিলয়।
এ সময় আসামি আনোয়ার হোসেনের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আটককৃতদের মধ্যে কথিত সাংবাদিক আনোয়ারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাকি তিনজন সরাসরি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ-ছয় মাস আগে আনোয়ার, মাহবুব ও ছাত্রদল নেতা মাইদুলের সঙ্গে ভুক্তভোগী ইসমাইলের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। ঘটনার দিন আনোয়ার, মাহবুব ও মাইদুলসহ কয়েকজন ইসমাইলকে ধরে জহির মার্কেটের পেছনে মাহবুবের ঘরে নিয়ে যায়, যেখানে পরবর্তীতে মারধর ও মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, আনোয়ারের নামে তার নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের জমি লিখে নেওয়া, দালালি, মিথ্যা মামলার হুমকি, গোপন তথ্য নিয়ে ব্ল্যাকমেইল, পরকিয়া সম্পর্কসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার নামে মাদক মামলা ও অপহরণসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
ভূরুঙ্গামারী থানার জি.আর ১৭৯/২৫ নং মামলায় আনোয়ার ও মাহবুব এজাহারভুক্ত আসামি। এছাড়া অজ্ঞাত ৬/৭ জনকেও আসামি করা হয়েছে।
ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল হেলাল মাহমুদ বলেন, “ভূরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ডে কচাকাটার এক যুবককে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটনায় কথিত সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আটক করে টাকা দাবির অভিযোগে অভিযান চালিয়ে আনোয়ারসহ চারজনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।”