বরগুনার পাথরঘাটায় আলোচিত গৃহবধূ মহিমা বেগমকে হত্যা মামলায় স্বামী, সতিন ও মেয়ের জামাইকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর গ্রামের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মাজেদ তালুকদারের ছেলে মো. কবির তালুকদার (৫২), মো. কবির তালুকদার এর ২য় স্ত্রী এলাচী বেগম (৪০), মৃত: মোস্তফা এর ছেলে মো. সুজন (৩০)।
নিহত মহিমা বেগম ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী কবির এর প্রথম স্ত্রী।
রায় ঘোষণার সময় আসামীরা উপস্থিত ছিলেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রঞ্জুয়ারা শিপু।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী হেলাল তালুকদারের মা ভিকটিম মহিমা বেগমকে পিতা আসামি কবির তালুকদারের ৩০ বছর পূর্বে বিবাহ করে। বৈবাহিক জীবনে বাদীর পিতা যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই তার মাকে নির্যাতন করতো। এছাড়াও তার ছোট বোনের শাশুড়ী আসামি এলাচি বেগমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। বাদীর বোন রেখা বেগম তার পিতা ও তার শাশুড়ীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় এবং এর প্রতিবাদ করায় শাশুড়ী এলাচী বেগমও জামাতা সুজন তার ওপর নির্যাতন চালানো শুরু করে। তাদের নির্যাতন সইতে না পেরে বোন রেখা বেগম রাগে ক্ষোভে আত্মহত্যা করে। রেখা বেগমের মৃত্যুর ৩ থেকে ৪ বছর পর কবির তালুকদার তার মায়ের অমতে বোনের শাশুড়ী এলাচি বেগমকে ২য় বিয়ে করে। তাদের বিয়ে না মানায় ভিকটিম মহিমা বেগমকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে এবং নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে বাদীর মা আত্মহত্যা করার জন্য বিষপান করে। পরবর্তীতে চিকিসায় বেঁচে গেলেও পরবর্তীতে আসামীরা ভিকটিম মহিমা বেগমকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩নং আসামী প্রস্তাব দেয় আমি কারেন্টের মিস্ত্রি। কারেন্টে শক দিয়ে হত্যা করে, কারেন্টের শক খেয়েছে বলে চালিয়ে দিবে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর শুক্রবার সকালে আসামি কবির তালুকদার বাদী হেলাল তালুকদারকে বলে, তোর শ্বশুর অসুস্থ্য তুই তারাতাড়ি যা। বাদী সরল বিশ্বাসে শ্বশুর বাড়ি কালমেঘায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার পর দেখতে পাই শ্বশুর সুস্থ্ আছে এবং তিনি তার পিতা কবির তালুকদারকে কোন ফোন করেননি।
বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, আমার শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার পর ঐ দিন দুপুর ১২ টা থেকে ১টার মধ্যে আমার মাকে তার বাবার বাড়ির সম্পতি বিক্রি করার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমার মা এতে রাজী না হওয়ায় আসামি কবির তালুকদার, আসামি এলাচি বেগম ও আসামি সুজনের সহয়তায় ভিকটিম মহিমা বেগমের ডান হাতের ৩টি আঙুলে, পিঠে ও বুকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করে। হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর আসামিরা চিৎকার করে বলে মহিমা বিদ্যুৎ এর শক খেয়েছে। আমি এই সংবাদ শুনে এসে দেখি ঘর থেকে ১০ মিটার দুরে আমার মা আমড়া গাছের সঙ্গে হেলে পড়ে আছে।
মামলার রায় শুনে বাদী হেলাল তালুকদার বলেন, রায়ে আমি আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। আমি আমার মায়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি হওয়ায় আমি আইনকে শ্রদ্ধা জানাই।
মামলা পরিচালনাকারী রাস্ট্র পক্ষের আইনজীবী নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর হোসনেয়ারা শিপু জানান, মামলার ভিকটিমকে পরিকল্পিতভাবে আসামীরা হত্যা করেছে। বিজ্ঞ আদালতের বিচারকের কাছে সাক্ষীদের সাক্ষ্যতে হত্যাকান্ডটি প্রমাণিত হওয়ায় আসামীদেরকে মৃত্যদন্ড প্রদান করেন এবং অনাদায়ে ১ লক্ষ টাকা করে অর্থ দন্ড প্রদান করেন। আমি রায়ে বিজ্ঞ আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি আরো বলেন, এই রায় প্রদানের মাধ্যমে সমাজে অপরাধ কমে আসবে।
মামলায় প্রধান আসামি কবির তালুকদারের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট তরিকুল ইসলাম তরু ফরাজী। আসামী এলাচী বেগন ও সুজনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট ইমরান হোসেন।