1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
দুমকিতে তরুণ মাইনুলের অনুপ্রেরণামূলক গল্প,পড়াশোনার পাশাপাশি সবজি চাষে সফল্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জে “শিবগঞ্জ সাংবাদিক ফাউন্ডেশন” এর আত্মপ্রকাশ শায়েস্তাগঞ্জে পুলিশের হাতে ৭০ কেজি গাঁজা উদ্ধার ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জয়পুরহাটে মানববন্ধন বৈষম্যের শিকার আকণ্ঠধারী শিক্ষকগণ সিদ্ধান্তে অনড় হবিগঞ্জের ৩৮ তরুণকে নিয়ে ইতালী যাওয়া নৌকা ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ জয়পুরহাটে বেসরকারি শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে পৌর আওয়ামী লীগ নেতার দখলে সরকারি জমি! প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে জনমনে প্র কাউখালীতে স্বপ্নসারথি গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনা রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক নিহত

বৈষম্যের শিকার আকণ্ঠধারী শিক্ষকগণ সিদ্ধান্তে অনড়

Miah Suleman
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪৮ বার পড়া হয়েছে
দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নের অঙ্গীকার আমরা বারবার শুনি—কিন্তু সেই শিক্ষার মূল ভিত্তি যাঁরা, সেই শিক্ষকরা আজ রাস্তায়, দাবিদাওয়া নিয়ে পুলিশের লাঠির সামনে। এটি শুধু বেদনাদায়ক নয়, জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনকও।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। বর্তমানে তারা এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া পান। অন্যদিকে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা মূল বেতনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া হিসেবে পেয়ে থাকেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের তুলনায় সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের চিকিৎসা ভাতাও তিনগুণ বেশি। অথচ উভয় ক্ষেত্রেই প্রার্থীরা অনার্স ও মাস্টার্স পাস।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তারা ১০ম গ্রেডে বেতন-ভাতাদি পান। অপরদিকে, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ২০১৫ সাল থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগ সুপারিশ পাচ্ছেন। বিসিএস নন-ক্যাডার এবং এনটিআরসিএ—দুই পরীক্ষার ধরন প্রায় একই। উভয় ক্ষেত্রেই প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রার্থীরা নিয়োগ পান। তবু বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় রয়েছে স্পষ্ট বৈষম্য।
সরকারি স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের প্রবেশ পর্যায়ে মূল বেতন ধরা হয় ১৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে তিনি বাড়ি ভাড়া পান প্রায় ৮ হাজার টাকা, যা সিটি করপোরেশন এলাকা—বিশেষ করে ঢাকায় আরও বেশি। এছাড়া তিনি চিকিৎসা ভাতা হিসেবে পান ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং বিশেষ সুবিধার আওতায় আরও কিছু অর্থ প্রাপ্ত হন।
অন্যদিকে, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ে সহকারী শিক্ষকদের বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে তাদের বাড়ি মাত্র ১ হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা। ফলে দেখা যায়, সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা যে বাড়ি ভাড়া পান, সেটি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার চেয়ে ৮ গুণ বেশি। এছাড়া সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি বছর সমানুপাতিক হারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পেলেও বেসরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তা হয় না। অর্থাৎ এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক ১০ বছর কিংবা ২০ বছর চাকরি করলে তারা এক হাজার টাকাই বাড়ি ভাড়া পাবেন।
বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। গত ১২ অক্টোবর ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সারা দেশে থেকে অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারী জড়ো হন প্রেস ক্লাবে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
শিক্ষকদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশের মধ্যস্ততায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের শীর্ষ দুই নেতা। তবে প্রজ্ঞাপন জারির ঘোষণা না পাওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। আন্দোলনের স্থান প্রেস ক্লাবের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ঘোষণা করা হয়। তবে শিক্ষকদের একটি অংশ শহীদ মিনারের পরিবর্তে প্রেস ক্লাবের সামনেই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বাধ সাজে পুলিশ।
প্রেস ক্লাব থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান নিক্ষেপ থেকে শুরু করে করা হয় লাঠিচার্জ। আহত হন বেশ কয়েকজন। গ্রেপ্তার করা হয় ৫ শিক্ষককে। যদিও রাতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে শহীদ মিনারেই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
বেদনাদায়ক বিষয় হলো—ন্যায্য দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের ওপর জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জ চালানো হয়েছে। এই ঘটনাটি আমাদের প্রশাসনের মানসিকতার নগ্ন প্রতিচ্ছবি। শিক্ষকরা শত্রু নন, তাঁরা আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়েন। অথচ সেই মানুষগুলোকেই রাস্তায় অপমানিত হতে হয়, আহত হতে হয়, গ্রেপ্তার হতে হয়—এ দৃশ্য সত্যিই মর্মান্তিক।
সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে এই বৈষম্য শুধু আর্থিক নয়, এটি নৈতিক অবিচারও। শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা মানে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অবহেলা। শিক্ষকেরা যখন ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন, তখন তা আমাদের সমাজের মানবিক ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
সরকারের উচিত, অবিলম্বে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া। তাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত রেখে শিক্ষা উন্নয়নের বড় বড় কথা বলা কেবল ভণ্ডামি। শিক্ষককে সম্মান না দিলে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়।
আজ জাতির বিবেক হিসেবে আমাদের স্বীকার করতে হবে—আমরা আমাদের শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। সময় এসেছে সেই ভুল শুধরে নেওয়ার। কারণ, শিক্ষক বাঁচলে তবেই শিক্ষা বাঁচবে—আর শিক্ষা বাঁচলে তবেই দেশ এগোবে।
এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com