তরুনরাই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ, দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্র, এনসিপি আসছে, শহরে, গ্রামগঞ্জে, আপনার দুয়ারে, আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ, চাঁদাবাজদের আস্তানা বাংলাদেশে হবে না ¯েøাগানে জুলাই গণঅভ‚্যত্থানের স্মরণ এবং ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির আয়োজনে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে পাচটার দিকে টাউন হলের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদযাত্রা শুরু করে নেতৃবৃন্দরা। এ উপলক্ষে সমাবেশ স্থলে বিরাজ করেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও পতাকায় সাজানো হয়েছে।
এনসিপি জেলা সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা এই পদযাত্রায় অংশ নেন। একটি বনাঢ্য মিছিলের মধ্য দিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্ত¡রের মুল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বরগুনা জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ফয়সাল মাহামুদ শাস্তের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও সাবেক উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নেতৃবৃন্দরা বলেন, একটা রাজনৈতিক দল সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার ব্যতীত এদেশের মানুষ তা প্রতিহত করবে।
সভা শেষে তারা জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও আহতদের খোঁজ খবর নেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা চরমোনাই মরহুম পীর সাহেবের কবর জিয়ারতের উদ্ধেশে রওয়ানা হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মোঃ নাহিদ ইসলাম বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার ও বিচার হওয়ার আগে কোন নির্বাচন হবে না। বরগুনা একটি নদী বেষ্টিত এলাকা। এটি একটি আওয়ামী লীগের গাটি ছিল। আমরা জানতাম স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে ছিলেন। আজ বরগুনা ঘুরে দেখলাম, এ অঞ্চলে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। উন্নয়ন হয়েছিল শুধুমাত্র লুটপাট আর দুর্নীতির। বরগুনায় সুপিয় পানির অভাব, ডেঙ্গুর কারনে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালটিতে ডাক্তার নেই। ১৭ বছরে বরগুনায় কোন উন্নয়ন হয়নি। আমরা কথা দিচ্ছি এই উপকূল এলাকায় মানুষের জনদুর্ভোগ লাগব করতে এনসিপি আপনাদের পাশে আছে।
পুরান ঢাকায় পুরান ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, বরগুনা এলাকার সন্তান সোহাগকে  বিভৎস্য ভাবে পাথর দিয়ে কিভাবে  জনসম্মুখে হত্যা করা হয়েছে। বরগুনা বাসী কি এই পাথর মেরে হত্যার রাজনীতি দেখতে চায়? বরগুনাবাসী কি এই চাঁদাবাজীর রাজনীতি দেখতে চায়? এসময় তিনি আরো বলেন, আপনাদের সন্তানকে ঢাকা শহরে যে ভাবে হত্যা করা হয়েছে আপনারা প্রতিবাদ তৈরী করুন। কিভাবে গণঅভ্যুত্থানের হাজারো মানুষের রক্তের পরেও এই সরকারের আইনশৃংখলার ব্যার্থতা এবং একটা রাজনৈতিক দলের  চাদাবাজদেরকে সমর্থন দেওয়ার পর আপনাদের সন্তানকে কিভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গণহত্যার বিচার আর নতুন বাংলাদেশের জন্য আমরা সংস্কার চাই। আমরা চাই নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে দুদক পর্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবে নিয়োগ হবে। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। আমরা কোন স্বৈরতন্ত্র বাংলাদেশে ফেরত আসতে দিবো না। আমরা বাংলাদেশ পন্থী রাজনীতি করবো। আমরা বাংলাদেশে ভারত পন্থী কিংবা পাকিস্তান পন্থি রাজনীতির কোন জায়গা হবে না। আমরা দেখেছি একটা দল ইতিহাসে এককালে পাকিস্তান পন্থিদের পুনর্বাসন করেছিলো। গনঅদ্ভুত্থানের পরে তারা আবার মুজিববাদীদের  পুনর্বাসিত করছে। আমি স্পস্টভাষায় বলছি বাংলাদেশে মুজিববাদিদের রাজনীতি হবে না, চাঁদাবাজদের রাজনীতি হবে না।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের বাঁধাদেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমাদের এই পথকে রুদ্ধ করার চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমি স্পস্টভাবে বলছি বাঁধা দিলে বাঁধবে লড়াই, সেই লড়াইয়ে আমরাই জিতবো। তরুন প্রজন্ম দ্বীর্ঘ লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। চাঁদাবাজরা ষরযন্ত্র শুরু করেছে তাদের বিরুদ্ধে দ্বীর্ঘ লড়াইয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আর চাঁদাবাজের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দেওয়া হবে না। এই বরগুনায় দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের লড়াই শেষ হবে সংসদে গিয়ে।
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমরা জানতাম হাসিনা নাকি দক্ষিণাঞ্চলকে উন্নয়নের জোয়াড়ে ভাসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজ আমরা বরগুনায় এসে দেখি এখানের রাস্তাঘাট গর্ত আর পানিতে ভেসে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, অদ্ভ্যুত্থান চলায় সময় এই সদর থানার ওসি সামনে থেকে আমাদের সহযোদ্ধাদের লাঠি চার্জ করেছে। বরগুনার পুলিশ ভাইরা যারা রয়েছেন তারা জনগনের পুলিশ হয়ে উঠুন। যদি কোন দলের পুলিশ হয়ে উঠুন তাহলে আগামীর বাংলাদেশে আর জায়গা হবে না। ২৪এ পার পেয়েছেন পরের বার জান নিয়েও পালাতে পারবেন না। প্রশাসনের প্রত্যেকটা পদে যারা আছেন, রাজনীতির প্রত্যেকটা পদে যারা আছেন আপনারা যে দলের হননা কেন চাঁদাবাজীর দিন শেষ, সিন্ডিকেটের দিন শেষ এনসিপির বাংলাদেশ।
বরগুনা এনসিপি আয়োজিত পদযাত্রায় আরো উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব জাফরিন জারা, শামান্তা শারমীন, বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক তালাত মোহামুদ রাফি।