1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দুমকিতে তরুণ মাইনুলের অনুপ্রেরণামূলক গল্প,পড়াশোনার পাশাপাশি সবজি চাষে সফল্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জে “শিবগঞ্জ সাংবাদিক ফাউন্ডেশন” এর আত্মপ্রকাশ শায়েস্তাগঞ্জে পুলিশের হাতে ৭০ কেজি গাঁজা উদ্ধার ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জয়পুরহাটে মানববন্ধন বৈষম্যের শিকার আকণ্ঠধারী শিক্ষকগণ সিদ্ধান্তে অনড় হবিগঞ্জের ৩৮ তরুণকে নিয়ে ইতালী যাওয়া নৌকা ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ জয়পুরহাটে বেসরকারি শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে পৌর আওয়ামী লীগ নেতার দখলে সরকারি জমি! প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে জনমনে প্র কাউখালীতে স্বপ্নসারথি গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনা রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক নিহত

গোল্ডেন ৫ বলে কোন গ্রেড নেই

রবিঊল ইসলাম রবীন,সহকারি অধ্যাপক, কলামিষ্ট
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪
  • ৪৭৬ বার পড়া হয়েছে
কিছুদিন আগের ঘটনা। এইচএসসি পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। নিজের মেয়ে সেই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। ফল পেয়ে অত্যন্ত খুশি মনে হেটেল থেকে মিষ্টি নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ফিরছি। পথে একজন জনপ্রতিনিধির সাথে দেখা।
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ’প্রফেসর, তোমার মেয়ের রেজাল্ট কি? উত্তর দিলাম, জ¦ী, মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ’গোল্ডেন পায়নি? আমি কাছে গিয়ে বললাম, জনাব, গোল্ডেন ৫ বলে কিছু নেই। যেটি আছে জিপিএ-৫ ।
এই হল আমাদের সামাজিক অবস্থা। বছরের পর বছর আমরা শিক্ষিতরা ’গোল্ডেন’ নামে অস্বীকৃত,ভুল একটা বার্তা আমরা আমাদের সন্তানদের শিখাচ্ছি। অনেক উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিরাও এই ভুল করে। আরও ভুল করছি, সন্তানের ফলাফলের শিট আমরা ফেসবুকে পোষ্ট দিচ্ছি। আপনার বাচ্চা সব বিষয়ে ৯৮/৯৯/১০০ পেয়েছে, সেটা অত্যন্ত খুশির খবর।
একজন পিতা-মাতার কাছে এর চেয়ে আর বড় কোন খুশির সংবাদ নেই। কিন্তু সেটি ফেসবুকে জানান দেওয়ার কিছু নেই। এই ভার্চুয়াল যুগে আপনার বাচ্চার স্কুলসহ সব তথ্য দেওয়াটা এক ধরনের বোকামি বলে আমার কাছে মনে হয়। আমি অকিঞ্চিৎকর মানুষ। আমার মতের সাথে হয়ত অন্যদের মিলবে না। তবে বাচ্চাদের মনে অহংকার জন্মে এমন কাজ মনে হয় করা ঠিক না। ঠিক যেটি, আপনার সন্তানকে খাঁটি মানুষ বানান। যেটি বর্তমান সংসারে খুবই অভাব।
গোল্ডেন জিপিএ নিয়ে লিখতে বসেছি। ২০০১ সাল থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়েছে। অনেকের ধারণা আছে যে, সব বিষয়েই ৮০-এর ওপরে নম্বর পেলে সেটি গোল্ডেন জিপিএ। কিন্তু সব বোর্ডের ফল নির্ধারণের পদ্ধতিতে গোল্ডেন জিপিএ গ্রেড খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমি বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তাদের সাথে কথা বলেছি, তাঁরাও বলেছে সঠিকটা হচ্ছে জিপিএ-৫ গ্রেড।
তা ছাড়া সনদ বা সার্টিফিকেটে কিন্তু জিপ্ওি-৫ ই লেখা থাকে। অসংখ্য ভুলে ভরা, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন আমাদের জীবন। আমরা নিজেরা পরীক্ষার যাওয়ার আগে ডিম খাইনি বলে আমাদের সন্তানরা সেই কুসংস্কারে বিশ^াসী হয়ে উঠছে। পরীক্ষার যাওয়ার সময় পিছন থেকে ডাকা যাবে না, দুই শালিক দেখলে অমঙ্গল হবে। শনিবারে অশুভ যাত্রা, বুধবারে শুভ যাত্রা- এসবে আমরা পড়ে আছি এখনো। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। চাঁদে মানুষ যাচ্ছে, ডিজিটাল জগৎ।
তাই আমাদের জীবনে যা ভুল হয়ে গেছে, আমাদের অনাগত সন্তানদের আর ভুল শিখানো যাবে না। ২৮ বছর শিক্ষকতা জীবন পার করলাম। অনেক অভিজ্ঞতা জীবনে হয়েছে। এসএসসি/এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেখে খুশিই লাগে। পেপারে আমাদের সন্তানদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ভাল কলেজ/ দুর্বল কলেজ নামে পরিচিতি পেয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি।
পৃথিবীর কোথাও কি এমনটা আছে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রতি বছর ৩০/৪০/৫০ টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাশ করে না। এবারে এসএসসি পরীক্ষায় ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ-ই পাশ করেনি। এটা কোন কথা?  কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ? কোন দিন তা জানা যায় না।
মফস্বল পর্যায়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা প্রতি মাসে সরকার মাসিক বেতন দেন শিক্ষক,কর্মচারীদের জন্য। বিনিময়ে সরকার বা রাষ্ট্র কতটুকু ফিডব্যাক পায়। স্কুল, কলেজে অনুপস্থিত না থাকাটা, পাঠাগার, ব্যবহারিক ক্লাস না করা বর্তমানে আর কোন অপরাধ নয়। এটা প্রধানেরা দেখে না, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা দেখে না, অভিভাবক দেখে না। তা হলে হচ্ছে টা কি ?
পাবলিক পরীক্ষায় সবচেয়ে অংক, ইংরেজী বিষয়ে ফেল করছে শিক্ষার্থীরা। বছরের পর বছর এটি হচ্ছে। এসব নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে কোন গবেষণা বা ভাবনা আছে? টাকা না দিলে আপনি প্রতিষ্ঠানে ভবন পাবেন না, রাজনৈতিক লবি না থাকলে আপনি ল্যাব পাবেন না। বোর্ড বলেন আর শিক্ষা ভবন বলেন, টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না। টাকা, রাজনৈতিক লবি না থাকলে স্কুল, কলেজে চাকরি পাওয়া যায় না- এই বিষয়গুলি শিক্ষার্থীরা অনেকে জেনে গেছে।
আর এসব জেনে খুব অল্প সময়ে তাঁরা অনেকে পড়াশুনা ঠিক মত করছে না। তাদের মধ্যে একটা হতাশা বিরাজ করছে। তাই অনেক ভুল ম্যাসেজ বা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে। শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক ভাবার সময় এসেছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও এসেছে মনে হয়।
কারণ শিক্ষা ছাড়া সমাজের আঁধার ঠেলা যায় না। আর জীবনানন্দ দাস বলেছেন, অদ্ভুদ এক আঁধার এক এসেছে পৃথিবীতে আজ। অন্ধ যারা তারাই সবচেয়ে চোখে দেখে। আর সন্তান জিপিএ-৫ পেলে তো বিষয়টা আনন্দের, তবে আনন্দটা স্থায়ী হবে সেই সন্তান যদি বাবা-মাকে শ্রদ্ধা করেন আজীবন। সাধ্যমত মানবসেবা করে আজীবন। মানবিক মানুষ হয়ে উঠে জীবনময়।
এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com