চাঁদা না দিলেই নিতে হবে মামলা ও হতে হবে হামলার শিকার। এবং সেই মামলায় আপোষ করতে হলে দিতে হবে মোটা অঙ্কের টাকা। মিশনপাড়ার বাসিন্দা রিয়াদের বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ করেছেন তাঁর নিজ এলাকার বাসিন্দারা। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ প্রায় এলাকাবাসী। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে করেছেন থানায় অভিযোগ। তবে মেলেনি কোন প্রতিকার!
নগরীর মিশনপাড়ার বাসিন্দাদের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছেন রিয়াদ। রিয়াদের বাড়ির আশে পাশে কেউ নুতুন ভবন নির্মান করলেই তাকে দিতে হবে চাঁদা অন্যথায় সে ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ করেন মিশনপাড়ার একাধিক এলাকাবাসী।
মিশনপাড়ায় বর্তমানে যে কয়টি নতুন ভবন নির্মাণাধীন, তার প্রায় প্রতিটি কাজেই বাধা দিয়েছেন রিয়াদ এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কয়েকজন বাড়ির মালিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে থাকি এখানে। নিজের পৈতৃক সম্পত্তিতে ভবন করছি। হঠাৎ একদিন ৪-৫ জন ছেলে এসে বললো, বসের অনুমতি ছাড়া এখানে কাজ হবে না।পরে রিয়াদ নিজেই ফোন করে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। না দিলে ভবনের সামগ্রী সরিয়ে ফেলা ও শ্রমিকদের মারধরের হুমকি দেয়।
এই ঘটনা শুধু একজনের নয়। এমন অভিযোগ করেছেন অন্তত ৮-১০ জন ভবন মালিক এবং কয়েকজন ঠিকাদার। তাঁদের ভাষ্য, এই চক্রটি নিয়মিত ভবন নির্মাণকারীদের কাছ থেকে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। যদি কেউ চাঁদা না দেয়, তাহলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা, পরে হয়রানিমূলক মামলা।
ভুক্তভোগীদের আরও অভিযোগ, রিয়াদ ও তাঁর সহযোগীরা শুধু চাঁদা আদায়েই সীমাবদ্ধ নন তারা একটি পরিকল্পিত হয়রানিমূলক আইনি প্রক্রিয়াও গড়ে তুলেছেন। কেউ চাঁদা না দিলে বা তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে তারা পাল্টা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন। পরে সেই মামলায় আপোষে আনতে দাবী করেন মোটা অঙ্কের টাকা।
এলাকাবাসী জানান, রিয়াদ একটি বড় রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের নাম ভাঙিয়ে এলাকায় দাপট দেখিয়ে থাকেন। তাঁর সঙ্গে এলাকার কিছু কাছের লোক মিলে তৈরি করেছেন একটি চক্র, যারা জমি দখল, দোকান নিয়ন্ত্রণ, ভবন নির্মাণ, এমনকি সড়কের পাশের ছোট দোকানদারদের থেকেও নিয়মিত চাঁদা আদায় করে থাকেন।
এলাকাবাসীরা রিয়াদের বিরুদ্ধে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায়। অভিযোগের কপিও দেখিয়েছেন অনেকে। কিন্তু পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ।
একজন প্রবীণ বাসিন্দা বলেন,থানায় গেলে বলে, প্রমাণ দেন। অথচ হামলার ভিডিও বা চাঁদা দাবির অডিও দিয়েও কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। বরং উল্টো রিয়াদ খবর পেয়ে গিয়ে হুমকি দেয়!
তবে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। যদি কেউ অপরাধ করে, তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকাবাসীর দাবি, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তারা স্থানীয় কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে বহুবার গেছেন। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং কিছু সূত্র বলছে, রিয়াদ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ পদক্ষেপ নিতে সাহস পাচ্ছে না।
এইবিষয়ে অভিযুক্ত রিয়াদের সাথে কথা বললে তিনি তাঁর উপর আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। এবং এই বিষয়ে তিনি আর কোন কথা বতে রাজি হননি।
মিশনপাড়ার জনগণের এই ক্ষোভ এখন শুধু একটি এলাকার নয় এটি হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ শহরের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সুশাসনের চিত্রপট। যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আগামীতে এ চক্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে, আর সাধারণ মানুষ আরও বিপদে পড়বে।