জেলার অন্যতম প্রধান যোগাযোগের রাস্তা নেত্রকোনা-কেন্দুয়ার সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার পথ যেন এলাকাবাসীদের কাছে জনদুর্ভোগের আরেক নাম। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে এই রাস্তাটি যান চলাচলের অযোগ্য। রাস্তার ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম এবং সিলেটে নিয়মিত ১২/১৪টি বাস চলাচল করে। কিন্তু বন্ধ আছে নেত্রকোনা-কেন্দুয়ায় বাস চলাচল।
ভঙ্গুর রাস্তায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় নিয়মিত চলছে সিএনজি অটোরিকশা। আর হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, পঙ্গুত্ববরণ করছে চালকসহ অসংখ্য যাত্রী। দেখা গেছে, দরিদ্র পরিবারের লোকজনও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিতে দৌঁড়াচ্ছে ময়মনসিংহ নগরীতে। কারণ সড়ক ও জনপথ নির্মিতব্য ২৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটারের এই রাস্তায় জেলা সদর থেকে কেন্দুয়ায় পৌঁছাতে স্বাভাবিকভাবে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। অন্যদিকে কেন্দুয়া উপজেলা সদর এবং কেন্দুয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার রামপুর থেকে ময়মনসিংহ নগরীর দূরত্ব যথাক্রমে ৪৫ এবং ৩৫ কিলোমিটার। যেখানে বাস অথবা সিএনজিযোগে যেতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, আদালতে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা এবং প্রশাসনিক কাজ ছাড়া কোনো মানুষই নেত্রকোনা আসতে চায় না। কেন্দুয়ার স্থানীয়দের টুকটাক বাজার করতেও ছুটতে হয় ময়মনসিংহ নগরী এবং পার্শ্ববর্তী জেলা শহর কিশোরগঞ্জে। এতে জেলা সদরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে প্রাচীন ময়মনসিংহের কেন্দুয়া উপজেলাবাসীর। রাস্তার দুর্ভোগের বিষয়ে কথা হলে রামপুর বাজারের ব্যবসায়ী মাসুম খান বলেন, নিজের জেলা শহরে বাসা থাকার পরও এই রাস্তার বেহাল দশার জন্য বেশির ভাগ সময় কষ্ট সহ্য করেও বাড়িতে থাকি।
ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম আক্ষেপের সুরে বলেন, কী বলব, এই একটা রাস্তার জন্য আমরা ৫০ বছর পেছনে পড়ে গেছি। সামনে ঈদ, এলাকার যুব সমাজ ছুটিতে এসে এই রাস্তা ধরে কোথাও বেড়াতে যাবে, বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যাবে তাও সম্ভব নয়। কারণ নির্মিতব্য এই রাস্তায় রৌদ্রে ওড়ে লাল ধুলো আর বৃষ্টিতে ছিটায় কাঁদাপানি। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কোনো পণ্য পরিবহনে পার্শ¦বর্তী এলাকাগুলোর চেয়ে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া লাগে। কেন্দুয়া উপজেলারআশুজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জনতা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, লাখো মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কেন্দুয়া নেত্রকোনার এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার দৃশ্যমান উন্নয়ন। এলাকাবাসীর পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, অনেক সময় চলে গেছে এই রাস্তার উন্নয়নে। এখন যেন আর সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত রাস্তার কাজটি সম্পন্ন করে জনদুর্ভোগের পরিসমাপ্তি ঘটায়।
নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়কের ‘প্রশস্তকরণসহ নতুন নির্মিত রাস্তা নির্মাণ কাজ’ প্রকল্পের ধীরগতিতে বেড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ। প্রকল্পটিতে মোট বরাদ্দকৃত অর্থ হচ্ছে, গণপূর্ত খাতে ১৪৫ কোটি আর ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ২০৮ কোটি, সর্বমোট ৩৫৩ কোটি টাকা। মোট ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে ২০১৯ সালে ২৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়কটির উন্নয়ন কাজের প্রকল্পের কাজ শুরু করে নেত্রকোনা সড়ক বিভাগ। তিনটি প্যাকেজে এমএম বিল্ডার্স, তানভীর কন্সাট্রাকশন, মইন উদ্দিন বাঁশি, ভাওয়েল কন্সট্রাকশন নামের ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করে ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি ও ২৬ এপ্রিল দুই দফায় কার্যাদেশ দেয় বিভাগটি। ৭০ ফুট প্রশস্থের পুরো সড়কজুড়ে ২৬ ফুট করে থাকছে বিটুমিন। এছাড়াও ২৬টি কালভার্ট এবং একটি সেতু রয়েছে।
প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয় নিয়ে কথা হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান জানান, প্রকল্পের কাজটি নির্ধারিত সময়ে শুরু না হওয়ায় এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে দুই বার সময় বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট কাজের ৫৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বর নাগাদ রাস্তার কাজ সম্পন্ন হবে।