আসছে বাজেট থেকে জমির মৌজামূল্য নির্ধারণে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। এবার থেকে জমির সরকারি মূল্য বা মৌজামূল্য নির্ধারিত হবে বাজারদরের ভিত্তিতে। সরকারের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ঋণচুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। সরকারি সূত্র জানায়, জমি কেনাবেচায় এখন পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৌখিক দর-কষাকষির ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। এতে অনেক সময় প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে দলিলে কম মূল্য দেখানো হয়, যার ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি তৈরি হয় এবং কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগও থেকে যায়। নতুন প্রক্রিয়ায় যা থাকছে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণে মানদণ্ড: প্রতিটি মৌজায় একই শ্রেণির জমির গত দুই বছরের দলিল মূল্য সংগ্রহ করে তার গড় মূল্য হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে সর্বনিম্ন দাম। এরপর গণশুনানির মাধ্যমে তা চূড়ান্ত করা হবে। বিক্রিমূল্য গড় দামের নিচে নয়: কোনো অবস্থাতেই দলিলে উল্লেখিত বিক্রিমূল্য এই নির্ধারিত গড় দামের চেয়ে কম হতে পারবে না। দ্বিগুণ দাম হলে ব্যাখ্যা বাধ্যতামূলক: যদি দলিলে দেখানো মূল্য নির্ধারিত গড় দামের দ্বিগুণের বেশি হয়, তাহলে তা করার জন্য নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, বাজারমূল্য গোপন রেখে মৌজামূল্যে লেনদেনে কালো টাকার ব্যবহার বেড়ে যায়। এই সংস্কারের ফলে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। রেজিস্ট্রেশন ও ফিতেও আসছে পরিবর্তন: নতুন বাজেটে শুধু জমির দামের নির্ধারণই নয়, জমি রেজিস্ট্রেশনের বিভিন্ন ফিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে: নিবন্ধন ফি: ১৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাট বা জমির ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি ২% থেকে কমিয়ে ১% করা হচ্ছে। ভূমি উন্নয়ন ফি: এটি ২% থেকে কমে ১% হচ্ছে। স্ট্যাম্প ফি: স্ট্যাম্প ডিউটিও ১% হারে নির্ধারণ করা হবে। গেইন ট্যাক্স বা উৎসে কর: এটি ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন পৌরসভায় হ্রাস করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, সর্বশেষ মৌজামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় সরকার এই হার হালনাগাদ করার পরিকল্পনা নিলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার আইএমএফ-এর ঋণ সহায়তার শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সংস্কার কার্যকর করতে যাচ্ছে। জমির দলিলমূল্য ও রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতেই এই উদ্যোগ। একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব আদায়ে লাভবান হবে, তেমনি জমির মূল্য সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও কালো টাকার প্রভাবও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।