বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে—প্রথমবারের মতো কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। মঙ্গলবার (১৩ মে) জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পেতে করা আবেদনের শুনানিতে এ মন্তব্য করেন তিনি। সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি নিজেই।
শুনানিকালে জামায়াতের পক্ষে প্রধান আইনজীবী হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, যাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
আদালতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের ও অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল।
শুনানিকালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইনজীবী জানান, হাইকোর্ট যখন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা নিয়ে রায় দেন, তখন থেকে ইসি এ ইস্যুতে নিরপেক্ষ অবস্থান নেয় এবং আপিল বিভাগের চূড়ান্ত নির্দেশনার অপেক্ষা করে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্টের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জামায়াতের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শুনানি শেষে আদালত পরবর্তী দিন অর্থাৎ বুধবার (১৪ মে) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রাখার নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও দলটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন। সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে জামায়াতের নিবন্ধন চূড়ান্তভাবে বাতিল করে।
পরবর্তীতে জামায়াত ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। তবে ২০২৩ সালের নভেম্বরে মূল আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ আবেদনটি ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে খারিজ করে দেন। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে ফের স্বীকৃতি পেতে আপিল বিভাগের কাছে নিবন্ধন রিস্টোর চেয়ে আবেদন করে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবীরা। গত বছরের ২২ অক্টোবর সেই আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আবেদনটি গ্রহণ করেন এবং ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দেন।
এর ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন এবং ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ফিরে পাওয়ার আইনি পথ আবারও উন্মুক্ত হয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এই আদেশ প্রদান করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।