টাঙ্গাইল জেলাতে মিষ্টির পর দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে ঝাল চাপড়ির স্বাদ। তুলনামূলক কম দাম আর মুখরোচক খাবার হওয়ায় সব শ্রেণিপেশার মানুষের খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে এই ঝাল চাপড়ি। শুরুটা টাঙ্গাইল জেলার আদালত প্রাঙ্গণে হলেও এর ব্যাপ্তি এখন জেলার ১২ উপজেলা জুড়েই । চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় যেমন বেড়েছে দোকানের সংখ্যা, তেমনি বেড়েছে তাদের আয় রোজগার।
টাঙ্গাইলের আদালত প্রাঙ্গণ এলাকা। এখানেই ডিসি অফিস, পুলিশ সুপার কার্যালয়, বিআরটিএ, পাসপোর্ট, নির্বাচন অফিস থাকায় ভোরের আলো ফুটতেই বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে নানা প্রয়োজনে ছুটে আসেন হাজারো শ্রেণী পেষার মানুষ জন । আর এসব মানুষের খাবারের চাহিদা মেটাতে আদালত প্রাঙ্গণের হোটেলগুলোর নানা খাবারের পাশাপাশি রয়েছে এই ঝাল চাপড়ির বিশেষ কদর।
কারিগররা জানান, ভোরের আলো ফোটার আগেই চাপড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এখানকার চাপড়ি কারিগররা। এই ঝাল চাপড়ি তৈরিতে বিশেষ কোনো মসলা ব্যবহার হয় না বললেই চলে। পানির সঙ্গে আটা, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, সামান্য কালোজিরা দিয়ে প্রথমে ভালো করে মিশিয়ে নেওয়া হয়। এরপর চুলায় বিশাল আকৃতির একটি কড়াই বসিয়ে তার উপর মিক্সড আটা লেপে দেওয়া হয়। মাটির চুলার অল্প আচে আস্তে আস্তে তৈরি হতে থাকে সুস্বাদু ঝাল চাপড়ির রেসিপি। মচমচে হলেই চুলা থেকে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করা হয় ক্রেতাদের মাঝে।
বিক্রেতারা আরও জানান, চাপড়ির সঙ্গে দেওয়া হয় কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ অথবা আলু ভর্তা। এই ঝাল চাপড়ির দাম আগে কম থাকলেও এখন অনেকটা বেড়েছে। মাত্র ২০ টাকার চাপড়ি খেয়ে একজন মানুষ সারা দিন কাজ করতে পারেন বলে যানান ক্রেতারা। এদিকে এই চাপড়ি খেলে সারা দিন কোনো ক্ষুধা লাগে না বলে জানান চাপড়িপ্রেমীরা।
টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে আদালত প্রাঙ্গণে কাজে আসা জাহিদুল কবিরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘কোর্টে একটা কাজে এসেছি। কিন্তু আশপাশে ভালো হোটেল না পেয়ে চাপড়ি খাচ্ছি। সাধারণ মানুষের কাছে শুনেছি, এটা অনেক মজাদার খাবার। এখন খেয়ে দেখলাম সত্যি অনেক মজা।’
জেলার নাগরপুর উপজেলা থেকে আসা শাকিল হোসেন বলেন, ‘পাসপোর্ট করার জন্য শহরে এসেছি। কিন্তু বাপ-দাদার কাছে শুনেছি, শহরের চাপড়ি নাকি অনেক সুস্বাদু। তাই খেতে এলাম। সত্যি অনেক মজাদার খাবার।’
রিকশাচালক ময়না মিয়া বলেন, ‘সকালে বাড়িতে ভাত খেয়ে রিকশা নিয়ে বের হই। দুপুরে কোর্ট চত্বরে এসে চাপড়ি খাই। চাপড়ি খেয়ে বিকেল পর্যন্ত রিকশা চালাই। কোনো রকম খারাপ লাগে না। শরীরে কোনো ক্লান্তি আসে না।’
আইনজীবী মাসুদ রানা বলেন, মাঝেমধ্যে বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের নিয়ে আড্ডা জমে এই চাপড়ির দোকানে আর দুপুর হলেই এখানে সাধারণ চাপড়িপ্রেমীদের ভিড় জমে ওঠে।’
এদিকে চাপড়ির চাহিদা দিন দিন বাড়ায় আদালত প্রাঙ্গণেই ৫০টির বেশি দোকান হয়েছে। ক্রেতাও বাড়ছে দিন দিন। ফলে ফুটপাতের দোকানিরাও প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারছেন।’
মফিজ মিয়া নামে এক চাপড়ি ব্যবসায়ী বলেন, ‘দিনে মোটামুটি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হয়। এই আয় দিয়ে সংসার ভালো চালাতে পারছি।’
সজীব মিয়া নামে একজন বলেন, ‘জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ এখন বেশি পড়ে। তাই দামটাও এখন একটু বেশি। তবে ২০ টাকার চাপড়ি কিনলেই পেট ভরে যায়।
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যাচ্ছে জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলা গুলোতেও এর সু খ্যাতি ছড়িয়ে পরেছে। বিভিন্ন উপজেলা শহর চত্তরে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট চাপড়ির দোকান, এছাড়া উপজেলার গুলোর বিভিন্ন বড় বড় হাট কিংবা বাজার গুলতে বসতে দেখা গেছে ভ্রাম্যমাণ ছোট ছোট চাপড়ির দোকান।