পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পেতে নাম ও বয়স বদলে অভিনব জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে এক চাকুরী প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ লাভের আশায় একই বছরে সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আবার একই বছরে বয়স বাড়িয়ে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের প্রশংসাপত্র দিয়ে অভিনব জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন মোঃ রাব্বী ইসলাম নামে এক চাকুরী প্রার্থী। জালিয়াতির অভিযোগ উঠার পরেও টালবাহানা করে সেই প্রার্থীর পক্ষেই অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ ও বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে।
অফিস সহায়ক পদে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া মোঃ রাব্বী ইসলাম দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের মাটিয়ার পাড়া এলাকার দুলাল আজাদের ছেলে।
সোনাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পেতে রাব্বী ইসলাম একই ইউনিয়নের অন্য একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্যাডে বানিয়েছেন ভুয়া প্রশংসাপত্র। জালিয়াতির জন্য প্রস্তুত করা অষ্টম শ্রেণি পাশের প্রশংসাপত্র, সমাপনী পরীক্ষার মূল সনদপত্র ও জন্মনিবন্ধনের কপি প্রতিবেদকের নিকট আসে। এতে দেখা যায়, রাব্বী ইসলাম ২০০৯ সালে সোনাহার আলমনগর (শান্তিনগর) প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে রেকর্ড ঘেটে দেখা যায় সেখানে তার জন্ম সাল উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯৮ সালের ২৯ এপ্রিল।
তবে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর না থাকায় তার এই সনদ আসল নাও হতে পারে বলে নানান যুক্তিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু এক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন গণমাধ্যম কর্মীদের।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজমল হোসেন বলেন, “যেখানে সনদে তৎকালীন মহাপরিচালক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেছেন সেখানে এমন কথা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।”
পরে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তার দফতরে সংরক্ষিত রেকর্ড যাচাই শেষে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন যে রাব্বী ইসলাম ২০০৯ সালে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। যেখানে তার বাবার নাম দুলাল আজাদ ও মায়ের নাম নিপা বেগম উল্লেখ আছে।
এর আগে সোনাহার আলমনগর (শান্তিনগর) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সনদটির বিপরীতে তথ্য যাচাই করতে গেলে সেখানকার প্রধান শিক্ষক রমাকান্ত রায় ও সভাপতি তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে, অষ্টম শ্রেণি পাশের যে প্রশংসাপত্র দেওয়া হয় আবেদনের সাথে তা একই ইউনিয়নের খারিজা সোনাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের। যদিও প্রশংসাপত্রটি জাল বলে নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আবু তাহের প্রধান। প্রশংসাপত্রে থাকা স্বাক্ষর ও প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, জন্ম সনদে আশ্রয় নেওয়া হয় সুক্ষ্ম কারসাজির। রাব্বী ইসলামের নাম বদলিয়ে করা হয় রাব্বী হোসেন। বাবার নাম একই থাকলেও মায়ের নাম নিপা বেগম থেকে বদলিয়ে করা হয় লিপা বেগম। আর জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে করা হয় ১৯৯৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারী।
এতসব তথ্য গোপন করে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে সোনাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ লাভের আশায়। অথচ সেই প্রার্থীর পক্ষেই সাফাই গাইছেন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু। যিনি নিজেও বর্তমানে দেবীগঞ্জ মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। কমিটির সদস্যদের নিয়ে আমরা বসবো। সে যেহেতু আবেদন করেছে। আমরা তার কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নিব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই পদে আবেদনকারী এক প্রার্থীর অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাব্বীর বাবা বিদেশ ফেরত। তাই তাদের টাকা আছে। টাকার জোরের কারণে তাদের জালিয়াতি ম্যানেজিং কমিটির কাছে কিছুই না।
এদিকে জালিয়াতির বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব বিদ্যালয়ের বাছাই কমিটির। বাছাই শেষে তা নিয়োগ কমিটির নিকট প্রেরণ করবে। প্রার্থীদের আবেদনে জালিয়াতির আশ্রয় নিলে তা বাতিল করা হবে।