পাবনার টেবুনিয়া বাজারে মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকাল ৪টায় অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে কুষ্টিয়াগামী ‘একতা পরিবহন’ বাসে পাচারকৃত অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করেছে প্রশাসন। পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে মোট ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২৩৪টি অবৈধ জাল জব্দ করা হয়। পরে জব্দকৃত জাল টেবুনিয়া স্কুল মাঠে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
অভিযানের সময় বাসে থাকা ৫ জন যাত্রীকে অবৈধ জাল পরিবহনের দায়ে ৪ হাজার করে মোট ২০ হাজার এবং বাসের সুপারভাইজার মিলন উদ্দিনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাসটিকে থামিয়ে তল্লাশি চালালে ছাদে রাখা মালামালের ভেতর ১৫টি বস্তা ও কার্টুন পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৪টি বস্তায় নতুন এবং ১১টি বস্তায় পুরনো কারেন্ট জাল ছিল। সংশ্লিষ্ট মৎস্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী, জালের মোট বাজারমূল্য আনুমানিক ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বাসের চালক রাসেল ও সুপারভাইজার মিলন উদ্দিন দাবি করেন, “আমরা ভাড়া পেয়েছি তাই মাল তুলেছি। কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ, তা যাচাই করা আমাদের দায়িত্ব নয়।” সুপারভাইজার জানান, প্রতিটি বস্তা ও কার্টুনের ভাড়া ১০০ টাকা করে মোট ১ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মালিগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনতাজ আলী বলেন, “এটা আমাদের এলাকার জন্য একটি সতর্কবার্তা। এই ঘটনা থেকে সবাই শিক্ষা নেবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অবৈধ কাজে কেউ আর জড়াবে না বলে আশা করছি।”
পাবনা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, “এই জাল এমনভাবে তৈরি যে মাছ, শাপলা, ব্যাঙ এমনকি ছোট পোকামাকড়ও এতে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এটি জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহারুল ইসলাম বলেন, “একটি ডিম থেকে পোনা জন্ম নিয়ে বড় হয়ে যখন খাদ্যে পরিণত হয়, তখনই তা মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করে। কিন্তু সূক্ষ্ম ফাঁসের এই ধরনের দুয়ারি জাল ব্যবহারে সেই পোনা অবস্থাতেই মাছ নিধন করা হয়। এর ফলে একসময় নদী, খাল, বিল— কোথাও আর মাছ থাকবে না।”
তিনি আরও বলেন, “পরিবেশ ও মৎস্য শিল্প রক্ষায় এ ধরনের অভিযান অতীতেও চালানো হয়েছে, ভবিষ্যতেও চলবে।”
অভিযানে আনসার সদস্যদের একটি চৌকস দল সার্বিক সহযোগিতা করে।
জব্দকৃত সব জাল ধ্বংস করে মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, এ ধরনের অবৈধ জাল শুধু মাছ নিধনই করে না, বরং দেশের পরিবেশ, অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তার ওপর দীর্ঘমেয়াদী মারাত্মক প্রভাব ফেলে।