প্রথমবার নির্বাচনে এসেই বাজিমাত করেছন ঢাকা-১১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ওয়াকিল উদ্দিন। এ আসনে প্রার্থী রয়েছে আটজন। তবে, আসনটি বাগিয়ে নিতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এই প্রার্থী। জীবনভর দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ওয়াকিলের রয়েছে নানা সফলতা ও ত্যাগের গল্প।
প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিলেও বাজিমাত করবেন জনপ্রিয় এই প্রার্থী- এমনটিই প্রত্যাশা স্থানীয় ভোটার ও তার সমর্থনকারীদের। সংসদ নির্বাচনে নতুন প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগে ওয়াকিল উদ্দিনের চেহারা নতুন নয়। ঢাকা-১১ আসনটি রাজধানীর পুরো বাড্ডা থানা ও ভাটারা থানার বেরাইদ, ভাটারা ও সাতারকুল ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২১, ২২ ও ২৩ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াকিল উদ্দিন রাজনীতির পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ীও। তিনি বারিধারা কর্পোরেশন লিমিটেড ও বারিধারা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান। এছাড়া দেশ সেরা আবাসন কোম্পানি স্বদেশ প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এ আসনে ওয়াকিল উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসাবে যারা আছেন তাদের অনেকেই রয়েছেন নামমাত্র প্রচারণায়। এসব প্রার্থীর মধ্যে ভোটের মাঠে দেখা যাচ্ছে জাতীয় পার্টির শামীম আহমেদকে, যিনি লড়ছেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে।
এছাড়া, ঢাকা-১১ আসনে সাধ্যমতো ভোটার স্লিপ নিয়ে ভোটারদের দুয়ারে যেতে দেখা গেছে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) মনোনীত প্রার্থী সাদিকুন নাহার খান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) মনোনীত ফারাহনাজ হক চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মিজানুর রহমান, গণফ্রন্টের শেখ মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের হোসেন আহমেদ আশিককে। আটজন প্রার্থী থাকলেও বাজিমাতের নিশ্চয়তায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের ওয়াকিল উদ্দিন।
সংসদ সদস্য প্রার্থী ওয়াকিল উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘৭ জানুয়ারি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের দিন ঢাকা-১১ আসনের সকল ভোটাররা অংশগ্রহণ করবেন। এ আসনে আরও সাতজন প্রার্থী রয়েছেন। সবাই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে ঢাকা-১১ আসনে। জনগণ ভোটের মাধ্যমে জবাব দেবেন আমি কতটুকু জনপ্রিয়।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে অধিকারী ওয়াকিল উদ্দিন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু তার। ১৯৬৯ সালে এসএসসি পাশ করার পর তেজগাঁও কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা জেলার ডেমরা-তেজগাঁও আসনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রার্থী হলে তার নির্বাচনি জনসংযোগে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গুলশান থেকে বিশাল লাঠি মিছিলসহ জনসভায় যোগ দেন ওয়াকিল উদ্দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নির্দেশে এবং পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে খণ্ডকালীন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩-৭৪ সালে তিতুমীর কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে সকল দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৪ সালে তৎকালীন বৃহত্তর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে ঢাকা মহানগর যুবলীগ বৃহত্তর গুলশান থানার সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জান্তা সরকার ধরপাকড় শুরু করে। সেসময় তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকার তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাড়িতে একাধিকবার অভিযান চালায়, না পেয়ে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে প্রায় তিন বছর মানবেতর জীবনযাপন করেন তিনি। ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে পুনরায় এলাকায় এসে নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী নিয়ে বিমানবন্দর সড়কে বনানী-কাকলী স্পটে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান।
১৯৮৮ সালে স্থানীয় সরকারের অধীনে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করার পর খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া আসন ঢাকা-৫ (তৎকালীন গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট)-এর উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের পক্ষে নির্বাচনি কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৮নং ওয়ার্ডের কমিশনার পদে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। ৯৩-৯৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রোষানলে পড়ে প্রায় ২৫টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হন। ৯৩-০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। ৯৩-৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে ২০০২-২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় থাকেন। ২০০৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।