পাইড়া (পাহাড়ি) ঢল নামলেঔ (নামলে) তো জাদুকাটা নদী অইয়া আবুয়া—ফতেহপুরেদি পানি আইয়া গনিয়ার বিল, হাওরি আলীপুরেদি পানি ঢুইক্কা (ঢুকে) হালিরহাওর ডুবি যায়, অখন কাম না করলে,  শেষ করবো কিবায় (কিভাবে), ইবার (এবার) ফসল লইয়া (নিয়ে) অখনঔ (এখনই) চিন্তা হামাইছে (ঢুকছে) হকলের (সকলের) মাথাত (মাথায়)।’

জামালগঞ্জের হাওরি আলীপুরের কৃষক খলিল মিয়া এমন দুশ্চিন্তার কথা জানালেন।

একই এলাকার কৃষক আয়না মিয়া বললেন, ‘অখনও মাটি কাটার মেশিন—টেশিন কোনতাঔ (কোন কিছুই) আইছে না, আরও কয়েকদিন আগেঔ ভাঙন এলাকা হুকাইগেছে (শুকিয়েছে), তারা (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বা পিআইসি) ইচ্ছা করলেঔ কাম (কাজ) আরম্ভ করতো পারে।’

কেবল জামালগঞ্জের এই কৃষক নয়। জেলাজুড়েই কৃষকদের মধ্যে হাওররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে।

হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরুর সময়সীমা ২৫ দিন পার হয়েছে। বেশিরভাগ বাঁধ এলাকা থেকে ইতোমধ্যে পানি নেমে গেছে। কিন্তু কাজ শুরু দূরের কথা, জেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারেও (গভীর ভাঙন এলাকা) এখনও গঠন করা হয়নি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)।

জেলার ১৪০০ কিলোমিটার হাওররক্ষা বাঁধের সুরক্ষায় ৭৩৩ টি বাঁধের কাজ এবার ৭৩৩ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে করার কথা। কাজ শুরু হবে ১৫ ডিসেম্বর শেষ হবার নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি।

মঙ্গলবার বিকালে সুনামগঞ্জ পাউবো’র দায়িত্বশীলরা জানান, জেলাব্যাপি ১৮০ টি ক্লোজারসহ ৭৩৩ টি বাঁধের কাজ করার জন্য ৬৩৩ টি পিআইসি গঠন হয়েছে। বাকীগুলো এখনো হয় নি। বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে ১৮৫ টি এলাকায়। এরমধ্যে ৩৫ টি রয়েছে ক্লোজার।

জেলার জামালগঞ্জের হাওররক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব পাউবো’র উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি জানালেন, ওই উপজেলার ৪৩ টি প্রকল্পের মধ্যে ৪০ টি’র প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন হয়েছে। ১৬ টি ক্লোজারের মধ্যে তিনটিতে কাজ শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে ১১ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি কাজ শুরু করেছে।

তাহিরপুরে গেল পাঁচ জানুয়ারি কেবল ৮২ টি বাঁধের কাজের জন্য ৮২ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন হয়েছে। কিন্তু এখনো এই উপজেলায় উল্লেখ করার মত কাজ শুরু হয় নি।

জেলা সিপিবি’র সভাপতি অ্যাড. এনাম আহমদ বললেন, পাউবো’র দায়িত্বশীলরা হাওররক্ষা বাঁধের যে অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন। বাস্তবে অগ্রগতি আরও কম। এবার হাওরের ফসলরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাটাচ্ছেন কৃষকরা।

হাওরপারের সম্ভাব্য বাঁধ এলাকা ঘুরে কৃষকদের দুশ্চিন্তার কথা শুনা গেছে। দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের রাজাপুরের বড় কৃষক ছত্তার মিয়া বললেন, দিরাই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারগুলোর মধ্যে অন্যতম বরাম হাওরের বৈশাখী বাঁধ। এই বাঁধেও মঙ্গলবার পর্যন্ত পিআইসি’র লোকজনকে দেখা যায় নি।

তিনি জানালেন, এই বাঁধ সময়মত না হলে দিরাইয়ের বিশাল বরাম হাওর, উদগল হাওরের ফসল অরক্ষিত থাকবে। আগাম বন্যা বা অতি বৃষ্টি হলে কালনী নদী ভরাট হয়ে বৈশাখী বাঁধ প্রতিবছরই হুমকিতে পড়ে। এর আগেও বহুবার এই বাঁধ ভেঙে বরাম ও উদগল হাওরের ফসল ডুবেছে।

জেলার জামালগঞ্জের হালি, শনি ও মহালিয়া হাওরের বিভিন্ন স্থানে ১৬ টি ক্লোজারের সৃষ্টি হয়েছে। এসব হাওরপাড়ের কৃষকরা জানিয়েছেন, একটি ক্লোজারেও উল্লেখ করার মত কাজ শুরু হয় নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার ৩৫ টি ক্লোজারসহ ১৮৫ টি বাঁধে কাজ শুরু হয়েছে দাবি করে বললেন, নির্বাচনের জন্য বাঁধের কাজের গতি কম ছিল, এখন দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হবে।