কত নেতা এলো, কত বাজেট বরাদ্দ হলো, কত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো—কিন্তু ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না কুড়িগ্রামের সোনাপুর, খেওয়ারচর, সাহেবের আলগা, খেদাইমারী, ঘুঘুমারী ও গেন্দার আলগাবাসীর। ব্রহ্মপুত্র নদের আগ্রাসী ভাঙনে এসব এলাকার মানুষ বারবার সর্বস্ব হারিয়ে আবার শূন্য থেকে শুরু করছে জীবন। নদীর ভাঙন যেন দিন দিন আরও হিংস্র হয়ে উঠছে। তার এই থাবায় কেউ হারাচ্ছে বছরের পর বছর জমানো সহায়-সম্পদ, কেউবা স্বপ্নের বসতভিটা। নদী গিলে খাচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, স্কুল-মসজিদসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৮৮৭ সালের বন্যা থেকেই এই ভাঙনের সূচনা। এরপর ১৯৫০ সালের আসাম ভূমিকম্প পাল্টে দেয় ব্রহ্মপুত্রের স্বভাবচরিত্র। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যা তো রেকর্ডই গড়েছে। তখন শুধু পানি নয়, ভয়াবহ ভাঙন নিয়ে এসেছে নদী। বহু মানুষ হয়েছে গৃহহীন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ এবং ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই চর এলাকার কোনো না কোনো গ্রাম হারিয়ে গেছে নদীগর্ভে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে এমন অবস্থা চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নদী আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে বসে অশীতিপর এক বৃদ্ধ অসহায়ের মতো বলেন, “গতকালও আমার সব ছিল, আজ কিছুই নেই। এর আগে ১২ বার ঘর সরিয়েছি, এবার দিয়ে ১৩ বার। আর যাওয়ার জায়গা নেই। আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা চাই নদী শাসন। কত কর্তা বাবু এলো, গেল, কিন্তু আমাদের দুঃখ কেউ দেখে না।” চর শৌলমারী ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রসহ আশপাশের বহু স্থাপনা এখন হুমকির মুখে। এভাবে চলতে থাকলে এসব জনপদের মানচিত্র থেকেও মুছে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। নদী শাসন ও স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে শুধুমাত্র মানবিক বিপর্যয় নয়, পরিবেশ ও অর্থনীতির দিক দিয়েও বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে পুরো অঞ্চল—এমন সতর্কবার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।