প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব জন্ম দিন আছে। অনেকে জন্ম দিন জাকযমকের সাথে পালন করে। সমার্থ না থাকলে অনেকেই পালন করে না। আবার অনেকের জন্মদিন স্মরনেই থাকে না। আজ এমন একজন মহামানবের জন্মদিন সমন্ধে বলতে চাই যার পৃথিবীতে জন্ম গ্রহন সমন্ধে ভাববাদীরা শত শত বছর পূর্বে ভাববাণী করেছিল। কালের পূর্ণতায় সেই সকল ভাববাণী পূর্ণতা লাভ করেছে। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্ম দিনকেই আমরা বড়দিন বলি।
২৫ শে ডিসেম্বর তিনি জন্ম গ্রহন করেছেন। সময়ের দিক থেকে ২৫ শে ডিসেম্বর দিনটি একটি ছোট দিন। কারন ২২ শে ডিসেম্বর সবচেয়ে ছোট দিন এবং ২১ শে জুন সবচেয়ে বড়দিন। ২৫ শে ডিসেম্বর দিনটিকে বড়দিন বলা হয় এই কারনে, যারা যীশুকে ত্রানকর্তা মুক্তিদাতা বলে বিশ্বাস করে,হ্নদয়ে ধারন করে এবং প্রভু বলে মুখে স্বীকার করে, তাদের কাছেই যীশুর জন্মদিন বলে বিবেচিত। সহজেই আমরা বুঝতে পারি যে এ দিনটি আকারে বা ঘন্টায় “বড়” নয়। বরং বলা যেতে পারে যে এটি বছরের খুব ছোট আকারের দিনের একটি। কিন্তু এ দিনটি “বড়” কারণ এর মহিমা বা গৌরব অনেক গভীর। এ দিনেই প্রভু যীশু জন্ম নিয়েছিলেন আমাদের মধ্যে যেন মানুষ স্বর্গের বাসিন্দা হতে পারে-যেন যে কেহ এই দিনের গভীরতা বুঝে প্রভু যীশুর কাছে আসে, সে বিনষ্ট না হয়,কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। আনন্দের হলেও এ দিনটির গভীরে দুঃখ লুকিয়ে ছিল। পিতা-তারঁ একজাত পুত্রকে আমাাদের পাপের জীবন হতে মুক্তির জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন-তিনি জানেন সমস্ত মানব জাতির পরিবর্তে প্রভু যীশুকে মৃত্যু-বরণ করতে হবে। দিনের পর দিন রাতের পর রাত তাকে দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। তাই পিতার চোখে জল। কিন্তু আমরা আনন্দিত। যা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না, এমন কি বহু ভাববাদী, ঈশ্বরের লোক ঈশ্বরের পক্ষে কাজ করেও এ অসাধ্য সাধন করতে পারেন নি, তা প্রভু যীশু এ জন্মের মধ্য দিয়ে শুরু করেছিলেন। তিনি জন্মেছিলেন বলেই আমরা আর মৃত্যুভয় করি না, তিনি দুঃখিত হয়েছিলেন বলেই আমরা আনন্দ করি। কারণ আমরা স্বর্গের সন্তান। লূক ২:১৪ পদ; ঊধর্বলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে [তাঁহার] প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি”। ডাঃ লূক প্রভু যীশুর জন্ম কাল সমন্ধে বিস্তারিত বর্ননা দিয়েছেন। রোম সম্রাট আগস্ত কৈসরের শাসন আমলে প্রথম নাম গণনা করা হয়। যোষেফ ও মরিয়ম নাম লিখে দেবার জন্য গালীলে নাসরৎ নগর থেকে যিহুদার বৈৎলেহমে দায়ুূদের নগরে গিয়েছিলেন।
সকলের উচিত রড়দিনের তাৎপর্য অনুধাবন করা।বড়দিনের তাৎপর্য বুঝতে হলে ৪টি বিষয় অনুসরন করতে হবে।
১ম বিষয়ঃ-বড়দিন ত্যাগের বিষয় শিক্ষা দেয়। ফিলিপীয় ২:৫-৮ পদে আছে-প্রভু যীশু স্বর্গে পরম সুখ,শান্তি ত্যাগ করে, মানব বেশ ধারন করে পৃথিবীতে এসে গোয়াল ঘরে যাবপাত্রে জন্ম গ্রহন করেন। সকল দুঃখ, কষ্ট, যাতনা-তাড়না, এমনকি ক্রুশীশ মৃত্যু বরন করে, নিজের জীবন পাপী মানুষের পরিত্রানের জন্য উৎস্বর্গ করেন। খ্রীষ্টিয়ান জীবন ত্যাগের জীবন,ভোগের জীবন নয়।
২য় বিষয়ঃ-বড়দিন আমাদের প্রেমের বিষয় শিক্ষ দেয়। যোহন ৩:১৬ পদের আলোকে -মানুষের কোন ধর্ম কর্মের ফল নয়, প্রার্থনার বা কোন যাচ্ঞার ফল নয়। ঈশ্বর স্ব-ইচ্ছায় আমাদের পরিত্রানের জন্য, নিজ প্রিয়পুত্রকে দান করলেন। মানুষের উচিত ঈশ্বরের প্রেমের প্রতি সারা দেওয়া। প্রকৃত প্রেম স্বর্গ থেকে আসে ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়।বড়দিনে একে অপরকে দান করি। কারন ঈশ্বরের শ্রেষ্ট দানের প্রতীক হিসাবে।
৩য় বিষয়ঃ-বড়দিন আমাদের শান্তি,আনন্দ দান করে। লূক ২:১০ পদের আলোকে- ইলিশাবেৎ যখন মরিয়মের কাছ থেকে যীশুর আগমন বার্তা শুনেছিল তখন তাহার গর্ভের সন্তান যোহন বাপ্তাইজক আনন্দে নেচে উঠেছিল। শিমিয়ন যিরুশালেম মন্দিরে শিশু যীশুকে কোলে তুলে নিয়ে আনন্দে বলে উঠেছিল,” আমার নয়ন যুগল পরিত্রাণ দেখিতে পাইল”। যখনই আমরা পাপের জীবন ত্যাগ করে খ্রীষ্টকে মুক্তিদাতা ত্রাণকর্তা বলে গ্রহন করি তখনই আমরা পরিত্রানের আনন্দ উপলদ্ধি করি।
৪র্থ বিষয়ঃ-বড়দিন আমাদের পরিত্রানের নিশ্চয়তা দেয়। প্রেরিত ৪:১২পদে- “আকাশের নীচে,মনুষ্যদের মাঝে আর কোন নাম নাই, যে নামে পরিত্রাণ পাইতে পারি। পাপের মাঝে পড়ে মানুষ যখন হাবু ডুবু খাচ্ছিল, মুক্তি লাভের কোন পথই ছিলনা,তখন প্রভু যীশু জন্ম গ্রহনের মধ্যদিয়ে মানুষ পরিত্রানের পথ খুঁজে পেয়ছিল। বিশেষ ভাবে প্রভু যীশু আমাদের পাপের শাস্তি নিজের স্কন্ধে নিয়ে ক্রুশীয় মৃত্যু বরণ করলেন। কবর প্রাপ্ত হলেন, ৩দিন পরে মৃত্যুকে জয় করে কবর থেকে পুনরুত্থিত হলেন। প্রায়শ্চিত্ত সাধনের মধ্য দিয়ে আমাদের জন্য পরিত্রানের সুযোগ করে দিলেন। যেন আমরা পাপ থেকে পরিত্রান লাভ করি। যোহন ১:২৯ পদে,”ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষ শাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান। এ জগতে অনেক ধর্ম প্রবর্তক, অনেক ভাববাদী, মহাপুরুষ এসেছেন, যারা মানুষের মুক্তির বাণী প্রচার করেছেন, কিন্তু কেউ বলতে পারেন নাই আমার কাছে এস, আমি তোমাদের মুক্তি দেব, পাপ সকল ক্ষমা করে পরিত্রান দেব। কেবল মাত্র প্রভু যীশুই মানুষের পাপ ক্ষমা করেছেন এবং পরিত্রাণ দিতে চেয়েছেন।
আসুন বন্ধুগণ আমরা বড়দিনের তাৎপর্য অনুধাবন করি। ত্যাগের জীবন, প্রেমের জীবম,আনন্দ ও শান্তির জীবন-যাপন করি এবং খ্রীষ্টকে জীবনে গ্রহন করে,হ্নদয়ে ধারন ও মুখে প্রভু বলে স্বীকার করে পরিত্রানের নিশ্চয়তা লাভ করি। তা হলেই আমাদের জীবনে বড়দিন সার্থক হয়ে উঠবে।