পটুয়াখালীর মহিপুর থানা আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় বেড়েই চলেছে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা। বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজসেই এসব চুরির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো গ্রাহকদেরই সতর্ক হতে বলছে কুয়াকাটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম মোতাহার হোসেন।মহিপুর থানায় ২৩-২৪ অর্থ-বছরের ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত চুরি হয়েছে ৫২টি ট্রান্সফরমার, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, দক্ষ না হলে কারও পক্ষে এসব ভারি ট্রান্সফরমার বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে চুরি করা অসম্ভব। এ চুরির সঙ্গে সমিতির অসাধু কর্মচারীরা জড়িত বলে ধারণা তাদের। ট্রান্সফরমারে মূল্যবান তামার কয়েলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকে। মূলত দামি কয়েলের কারণেই চুরি হয় এসব ট্রান্সফরমার দাবী বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষের।সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ডিসেম্বর মাসে ১০ তারিখ রাতে লতাচাপলী ইউনিয়নের মাইটভাঙ্গা গ্রাম থেকে ২ টি ও বরকুতিয়া থেকে ১টি এবং ১৫ ডিসেম্বর রাতে থানার লতাচাপলীর পশ্চিম খাজুরা গ্রামে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে চুরি হয় ২টি ট্রান্সফরমার। এতে বিপাকে পড়েন এর আওতাধীন অন্তত কয়েকশত পরিবার। এসব ট্রান্সফরমার চুরি হলেই তাদের গুনতে হয় টাকা, প্রথমবার চুরিতে মাশুল দিতে হয় মিটারের পুরো দামের অর্ধেক, দ্বিতীয়বার চুরি হলে পুরোটাই গুনতে হয় তাদের। অনেকেই আবার ধার্যকৃত মিটারের টাকা বিদ্যুৎ বিলের সাথে পরিশোধ করে থাকেন।তুলাতলী গ্রামের বাসিন্দা শওকত জানান, ট্যান্সফরমার চুরিতে গ্রাহকদের থেকে টাকা নেওয়া এটা এক ধরণের গ্রাহক হয়রানি, মিটারের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন জোরালো পদক্ষেপ না থাকায় এভাবে চুরি হচ্ছে।ইয়াকুব গাজী নামের এক গ্রাহক বলেন, আমার গ্রামে একই দিনে ৩ টা ট্যান্সফরমার চুরি হয়েছ। এক একটি ট্রান্সফরমারের ওজন অনেক, সাধারণ কারও পক্ষে এ কাজ করা অসম্ভব। আমার ধারণা এ চুরির সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন জড়িত। কারণ, অভিজ্ঞতা ছাড়া এ কাজ কেউ করতে পারেনা। আর এসব মিটার আমাদের বাসা থেকে অনেক দূরে রাস্তার পাশে লাগানো হয় বলেই চুরি করা সহজ।এ বিষয়ে কুয়াকাটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম মোতাহার হোসেন বলেন, চুরির বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকবার থানাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। ট্রান্সফরমার চুরি রোধে এলাকায় একাধিকবার মাইকিং করেছি যাতে গভীর রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ গেলে গ্রাহকরা একটু আশেপাশে খোঁজ খবর রাখেন। যদি আশেপাশে অযাচিত অপরিচিত লোক ঘোরাফেরা করে তাদের উপর নজরদারি বাড়ালে এটা রোধ করা সম্ভব। স্বাভাবিক আবহাওয়ায় সচারাচর বিদ্যুৎ বন্ধ হয় না। গভীর রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ গেলে গ্রাহকরা একটু এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ালে চুরির প্রবনতা রোধ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে একাধিকবার থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েও কোন সহযোগিতা পাইনি আমরাপটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ম্যানেজার তুষার কান্তি বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছি। তবে চুরির পরে ট্রান্সফরমার গুলো ভেঙ্গে ফেলায় উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছেনা।মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একাধিক সাধারণ ডায়েরির পরিপেক্ষিতে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।