রংপুরের মিঠাপুকুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত, আফসার আলী মন্ডল (৭০) নামে এক বৃদ্ধ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। গত -বৃহস্পতিবার (২৪জুলাই) দুপুরে নিজের জমিতে ধান লাগাতে গেলে তাকে সহ পাঁচজনকে প্রতিপক্ষের লোকজন এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম ও গুরুতর আহত করেন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আহতদের মধ্যে আফসার আলী মন্ডলের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ৫দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আফসার আলী (মঙ্গলবার) ভোর রাতে মৃত্যুবরণ করেন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, মিঠাপুকুর উপজেলার ০৮ নং চেংমারী ইউনিয়নের, আবীরের পাড়া গ্রামের, আফসার আলী মন্ডলের সঙ্গে পাশ্ববর্তী ১৩ নং, গোপালপুর ইউনিয়নের শাল্টিপাড়ার শাহজাহান, সামছুল এবং মর্জিনা গং-দ্বয়ের বিরোধ চলে আসছিলো। আফসার আলী মন্ডলের নামে জমির সমস্ত কাগজপত্রাদি ঠিক থাকলেও লালমিয়া এবং মনজুরুল ইসলাম নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তি শাহজাহান, সামছুল গং-দ্বের উস্কে দিয়ে আফসার আলী মন্ডলের জমি দখলের চেষ্টা চালান। আফসার আলী মন্ডল, জমি রক্ষায় আদালতে ১৪৪/১৪৫ ধারার আবেদন করেন। এবং আদালত উক্ত জমিতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেন। কিন্তু তবুও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিবাদীরা একাধিকবার জমি দখলের চেষ্টা করেন।
বুধবার (২৩ জুলাই), আফসার আলী মন্ডল জমিতে গাছ লাগাতে গেলে লালমিয়া এবং মনজুরুল পাশ্ববর্তী আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি থেকে লোকজন নিয়ে এসে আফসার আলীকে গাছ লাগাতে বাঁধা দেয়। পরে আফসার আলীর মেয়ে ৯৯৯, এ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং উভয়পক্ষকে থানায় ডেকে বসার পরামর্শ দেয়। উভয়পক্ষের লোকজন রাতে উপস্থিত হলে পুলিশ জমির কাগজপত্র এবং আদালতের নির্দেশনা এবং দখল স্বত্ব অনুযায়ী শাহজাহান এবং সামছুল গং-দ্বের উক্ত জমিতে ঝামেলা সৃষ্টি না করার পরামর্শ দেন। যেহেতু আফসার আলী ৬০/৭০ বছর ধরে জমির দখলে আছেন। এজন্য চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শাহজাহান, সামছুলকে ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু লালমিয়া এবং মনজুরুল পুলিশের সঙ্গে তর্কবিতর্ক সৃষ্টি করে জমি তারা নিজেরা চাষ করবেন বলে হুমকি দিয়ে চলে যান।
এরপর দিন, (বুধবার) দুপুরে আফসার আলী, জমিতে পানি নিতে গেলে মনজুরুল এবং লালমিয়ার নেতৃত্বে ২০/৩০ জন লোক আফসার আলীকে মারতে শুরু করে। খবর পেয়ে আফসার আলীর মেয়ে আদুরী, ছেলে এরশাদ, ইকবাল, সাজু,মিনি বেগম সহ কয়েকজন তাকে উদ্ধারে গেলে তাদেরকেও বেধড়ক মারপিট করা হয়। এসময় দেশীয় ছোরা দিয়ে আফসার আলীকে মনজুরুল সহ কয়েকজন এলোপাতাড়ি কোপায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে ভর্তি করান।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-অপারেশন) হাফিজ বলেন, মারামারির ঘটনার দিনেই মামলা রেকর্ড করে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন এটা হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মনজুরুল আর লাল মিয়া, যদি পুলিশ এবং স্থানীয়দের কথা শুনতো তাহলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটত না। নিজেদের স্বার্থে জলঘোলা করতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এ রিপোর্ট লেখা অবধি আফসার আলীর মরদেহের পোস্ট মর্টেম চলছে।