পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে সদরের চাঁচড়া ইউনিয়ন থেকে ৪৫ বছর বয়সী ক্রাচ হাতে এক প্রতিবন্ধী আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কক্ষের সামনে। অফিস সহকারীর কক্ষে এসে জানান তাকে প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়ার। তখন অফিস সহকারী জানান এখানে কার্ড দেওয়া হয় না, ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করতে হবে । এক পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ঐই ব্যক্তি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে গালিগালাজ শুরু করেন। তখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের অফিস সহকারীরা তাকে নিষেধ করলে দুপক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটির ঘটনা ঘটে। তখন প্রতিবন্ধী ঔই ব্যক্তির হাতে থাকা ক্রাচ দিয়ে বাবুল আক্তার নামে অফিস সহকারীর মাথায় আঘাত করে। এরপর আরেক অফিস সহকারী বাবুল আক্তারকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর ও হাতে কামড় দেন। অন্য কর্মচারীরা এসেও প্রতিবন্ধীকে মারধর করে।
এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আড্ডা দেওয়া ১০ থেকে ১৫ শিক্ষার্থীরা প্রতিবন্ধীর পক্ষে নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করতে এগিয়ে আসলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারীদের সঙ্গে তারা বাগি¦তণ্ডায় জড়ান। এরপর কয়েকজন বাঁশ দিয়ে জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখায় হামলা করে এবং ভাংচুর করার চেষ্টা করে। পরে কর্মচারীরা পাঁচজনকে নেজারত শাখাতে আটকে রাখে। পরে পুলিশ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের আহত অফিস সহকারী আবু হাসান বলেন, ‘প্রতিবন্ধী লোকটি এসেছিলো কার্ডের জন্য। আমরা তাকে বুঝিয়েছি। তিনি তার পরেও চিৎকার করে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। তাকে বলি জেলা প্রশাসেকর কার্যালয়ে স্যারেরা আছে চুপ করেন। তারপরেও গালিগালাজ দিতেই থাকে। তার কাছে গেলে সে আমাদের এক সহকর্মীর মাথায় আঘার করে। এরপর আবার মারতে গেলে আমি ঠেকাতে গেলে আমাকেও মারধর শুরু করে। শেষে কামড় দেয়। পরে আমাদের অন্য সহকর্মীরা তাকে নিচে নামিয়ে দেয়। তারা প্রতিবন্ধীকে মারধর করেননি বলে দাবি করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর হামলা চালায়।’ শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের গোলযোগের এক ফাঁকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর ত্যাগ করেন বলেন স্থানীয়রা জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী ঔই ব্যক্তির নাম মনিরুল। তিনি চাঁচড়া এলাকার খোরশেদের ছেলে।
নেজারত শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহিদুজ্জামান বলেন, ‘১০-১৫ জন শিক্ষার্থী আমাদের কক্ষে হামলা চালায়। তাদের মধ্যে একজনের হাতে বাঁশ ছিলো। সে আমাদের কক্ষের দরজা ও জানালায় বাড়ি মারেন। যেহেতু এগুলো বৃষ্টিশ আমলের রড দিয়ে বানানো বলে ভাংচুরের দৃশ্যত ক্ষত হয়নি। এমনকি তারা আমাদের কক্ষেও এসেও কয়েকজনের উপর হামলা চালায়। পাঁচ জনকে আটকে রাখতে পারলেও বাকীরা পালিয়ে যায়।’
আটক হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আমরা ডিসি অফিস চত্বরে বসে ছিলাম। দেখি অসহায় প্রতিবন্ধী একটা মানুষকে মারধর করছে কিছু লোক। এসে শুনি তারা জেলা প্রশাসকের কর্মচারীরা। তাই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। প্রতিবন্ধীর দোষ ছিলো কিনা সেটা জানি না। তবে হামলা করা ভুল হয়েছে বলে তারা গণমাধ্যমের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন।
এদিকে এক পর্যায়ে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক বাবুল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম আসেন ঘটনা স্থলে। পরে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীদের নিয়ে জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলামের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিকাল চারটার দিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের মুচলেকা নিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক বাবুল হোসেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারীরা জানান, সম্প্রতি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোরের অনন্য পুরাকীর্তির কালেক্টরেট ভবন সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। যার ফলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ভবন চত্বরে দর্শনার্থী ও সেবাগ্রহীতাদের ভিড় থাকে। কিন্তু স্কুল কলেজ চলাকালীন শিক্ষার্থীরা এখানে এসে আড্ডা দেন। যার কারণে প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন তারা।