রাজধানীতে হঠাৎ করেই মশার উপদ্রব জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলছে। মশার উপদ্রবে ডেঙ্গু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে রাজধানীবাসীর মনে।
দেশে আগে থেকেই ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ থাকলেও গত বছর ২০২৩ সালে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। গত বছরে আক্রান্তের হার যেমন বেড়েছে, তেমনি মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে। গত ২৩ বছরে দেশে ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৮৬৮ জন। কিন্তু শুধু ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৬৯৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অর্থাৎ গত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, শুধুমাত্র গত এক বছরে তার চেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে মারা গেছেন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মশার ওষুধ ছিটানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মত নানা পদক্ষেপ নিলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি ডেঙ্গু।
এদিকে কয়েক সপ্তাহ ধরে মশার উপদ্রবে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন নগরবাসী। তারা বলছেন, নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। আবার মাঝে মাঝে যে মশক নিধন স্প্রে করা হয় তাও কার্যকর নয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। একই সঙ্গে তাদের মনে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রাজধানীর মহাখালী এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথেই মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কয়েল, স্প্রে বা মশারি টাঙ্গিয়েও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। কেউই স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। ফারুক হোসেন নামে একজন ভাসমান চা বিক্রেতা দি ক্রাইমকে বলেন, কোথাও দাঁড়াতে পারি না মশার কারণে। হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মশা এমনভাবে কামড় দেয় যেনে হয় শরীরে পিঁপড়া কামড়াচ্ছে। মশার জ্বালায় টেকা যায় না।
মহাখালী ওয়্যারলেস গেইটের বাসিন্দা নাজমা আনোয়ার বলেন, দিনেও মশা প্রচুর কামড়ায়। মাঝে মধ্যে সিটি কর্পোরেশন মশার ওষুধ দিলেও কোনো কার্যকারিতা নেই, মশা কমে না। মশার অত্যাচারে দিনের বেলাতেও কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। ফিরোজ আলম জানান, সম্প্রতি মহাখালী ওয়্যারলেস গেইট টিএন্ডটি পূর্ব কলোনি এলাকায় মশার উপদ্রব চরম বেড়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও এখানে এত মশা ছিল না।
উত্তরা ৪নং সেক্টর এলাকার তিনজন বাসিন্দা জানান, ঘরে-বাইরে দিনরাত মশার উপদ্রব। তবে মশকনিধনে সিটি কর্পোরেশনকে ওষুধ ছিটাতে খুব একটা দেখা যায় না। এ ছাড়া বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গাছের পাতা-ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকার পাশাপাশি রাস্তায় বালু-পাথর স্তূপ করে ফেলে রাখায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে।দক্ষিণখানের বাসিন্দা আলাউদ্দিন ডাক্টার বলেন, মশার উপদ্রব ভয়াবহভাবে বেড়েছে। সিটি কর্পোরেশন রাস্তা ঝাড়ুও দেয় না কিন্তু হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের তাগাদা দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে চিঠি ঠিকই পাঠাচ্ছে।