লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের তিস্তা নদী বেষ্টিত হরিণচড়া গ্রামে ব্যাপকভাবে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে পানি বাড়তে থাকায় তিস্তা নদীর ডান তীরের এ গ্রামে নদীভাঙ্গনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০টি বসতভিটা ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে চলে গেছে ধান-সবজিসহ ৩শ’ বিঘা জমি। নদী ভাংগন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, একটি করে বাড়ি কয়েকবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। বারবার এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় বসতভিটা নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হচ্ছে তাদের। গবাদিপশু ও পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
ফসলি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে অসহায় পরিবারগুলোর যেন কান্নার শেষ নেই। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সুত্রে জানা যায়; বরাদ্দ পেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধে আপদকালীন জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬, ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও। এছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আদর্শ পাড়া, কুঠি পাড়া, মিলন বাজার, প্রেমের বাজার এলাকা। সেই সাথে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে খুনিয়াগাছ-রাজপুর-রংপুর যাতায়াতের একমাত্র পাকা রাস্তাটি। হরিণচড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তিস্তার নদীভাঙনের কারনে আমরা দিশেহারা। বর্তমানে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ডানতীর দিয়ে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, পাকা রাস্তা, মসজিদসহ বাজার।
এ গ্রামটিতে প্রায় ১২ হাজার লোকের বসবাস রয়েছে। নদীভাঙ্গনে একেকজন ৩ থেকে ৫ বার পর্যন্ত বসতভিটা সরিয়েছেন। জমি জায়গা নদীতে বিলীন হওয়ার কারণে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব মানুষজন উচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের একসময় সহায়সম্বল সবকিছুই ছিল। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিল। ছিল না অভাব অনটন কিন্তু তিস্তার বন্যা আর নদীভাঙ্গনে নিঃস্ব এখন এসব পরিবার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ভাঙ্গন প্রতিরোধে এর আগে তারা নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ দিয়েছেন।
কিন্তু তিস্তার প্রবল পানির স্রোতে সে প্রতিরক্ষা বাঁধও ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তাই সরকারিভাবে ভাঙ্গনরোধের ব্যবস্থার দাবি জানান স্থানীয়রা। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শূনিল কুমার রায় জানান, তিস্তা নদীতে এরকম প্রায় ৪৮টি এলাকায় কম বেশি ভাঙ্গন হচ্ছে। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কিছু কিছু জায়গায় কাজ চলমান রয়েছে। ভাঙনের এসব তথ্য আমরা প্রেরণ করেছি। অনুমতি সাপেক্ষে কাজ বাস্তবায়ন করলে স্থানীয়দের দুঃখ দুর্দশা কিছুটা কমে যাবে।