বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) স্বেচ্ছাসেবী তিনটি ব্লাড ব্যাংক ক্লাবসন্ধানী, যুব রেড ক্রিসেন্ট, এবং মেডিসিন ক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাময়িকভাবে ক্লাবগুলোর কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনির এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, যাতে সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলা এড়ানো যায় পরিস্থিতি শুরু হলো কীভাবে ঘটনার সূত্রপাত হয় গত বৃহস্পতিবার, যখন মেডিক্যাল কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ক্লাবগুলোর নেতৃত্ব পুনর্গঠনের দাবি জানান।তারা অভিযোগ করেন যে, পূর্ববর্তী কমিটিগুলো দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের প্রভাবাধীন ছিল এবং তা গণতান্ত্রিক ও সংগঠনতান্ত্রিক নিয়মনীতি অনুসরণ করেনি এই শিক্ষার্থীরা পরিচালকের কাছে ক্লাবগুলোর কমিটি সংস্কারের দাবি জানান এবং আলোচনার জন্য সময় চান।এর প্রেক্ষিতে পরিচালক হাসপাতালের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধানের আশ্বাস দেন কিন্তু আলোচনার আগেই ক্লাবের একটি পক্ষ অফিসগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়।কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য পক্ষ সেই তালা ভেঙে ফেলে, যা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্লাবগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন এবং অফিসগুলোতে নতুন করে তালা লাগানো হয়।
ক্লাবগুলোর অবদান সন্ধানী, যুব রেড ক্রিসেন্ট, এবং মেডিসিন ক্লাব শেবাচিম হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা প্রতিদিন শতাধিক রোগীর জন্য বিনামূল্যে রক্ত সংগ্রহ ও বিতরণ করে। এছাড়া, স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি, জরুরি রক্তদান কার্যক্রম, এবং রোগীদের জন্য নানাবিধ সহায়তা প্রদান করে থাকে এই ক্লাবগুলো দীর্ঘদিন ধরে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য নেতৃত্ব গঠনের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। তবে রাজনৈতিক প্রভাব ও কমিটি নিয়ে বিরোধ তাদের কার্যক্রম ব্যাহত করছে।উত্তেজনার কারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অভিযোগ করেছে যে, পূর্ববর্তী সরকারের সময় ক্লাবগুলো সংগঠনবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হয়েছে।ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা এসব ক্লাবের উপর একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করেছেন। তবে ২০২৩ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ক্লাবগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসেকিন্তু সম্প্রতি আবারও পুরোনো পক্ষগুলোর মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এক পক্ষ ক্লাবের অফিসে নতুন করে তালা লাগায়।অপর পক্ষ এসে সেই তালা ভেঙে ফেলে। এ নিয়ে তীব্র বাকবিতণ্ডা শুরু হয়, যা উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাসপাতাল পরিচালক আপাতত ক্লাবগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দে। তিনি জানিয়েছেন যে, দুই পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে।তিনি আরও বলেন,মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করব। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত ক্লাবগুলো বন্ধ থাকবে।”
শিক্ষার্থীদের মতামতমেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, “আমরা ক্লাবগুলোর গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি।রিফর্মের আগে ক্লাবগুলোর কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।” অন্যদিকে, ছাত্রলীগের প্রভাবিত পক্ষ দাবি করেছে, তারা ক্লাবের দীর্ঘমেয়াদি ঐতিহ্য রক্ষা করতে চায় এবং দায়িত্বহীন আচরণ সহ্য করা হবে না।
পরবর্তী পদক্ষেপ আজ রবিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসবে। আশা করা হচ্ছে, আলোচনা থেকে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বেরিয়ে আসবে। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা কমানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
সমাধানের প্রয়োজনীয়তাশেবাচিম মেডিক্যাল কলেজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম শিক্ষার্থী ও রোগী উভয়ের জন্যই অপরিহার্য।তাই নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ দ্রুত সমাধান করে ক্লাবগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে হবে। এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করাই হবে উত্তম সমাধান।
সারমর্ম বরিশাল শের-ইবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই ঘটনা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, বরং পুরো মেডিক্যাল পরিষেবার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সকল পক্ষের শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করা অত্যন্ত জরুরি।