চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারঘরিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কালু—এক সময়ের অশিক্ষিত ভ্যান চালক এবং ইটভাটায় কাঠ মাপার শ্রমিক, আজ স্থানীয়ভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন ‘চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের প্রধান’ হিসেবে। তার এই অদ্ভুত উত্থানকে সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না। একসময় যিনি রাস্তার ধারে রিক্সা ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন, আজ তার গাড়ি বাড়ি আলিশান প্রাসাদের কারবার হঠাৎ করে কোটিপতি হওয়ার দৃশ্য নিয়ে জনগণের কাছে গুঞ্জন হিসাবে আনাগোনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে তার এই অপকাণ্ডের রাজত্ব।
সদর উপজেলার বারঘরিয়া ইউনিয়নের তারই প্রভাবশালী মেম্বার কালু, বর্তমানে স্থানীয়ভাবে ‘চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের নেতা’ হিসেবে পরিচিত আকার ধারণ হয়ে উঠেছেন। তবে গণঅভ্যুত্থানের সুযোগে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে তিনি একের পর এক চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে এ নিয়ে জনমনে বিশাল আকার ধারণ করেছে জেলা জুড়ে।
কালু মেম্বারের চাঁদাবাজ সাম্রাজ্য: ইটভাটা, দোকান উচ্ছেদ ও আগুন দিয়ে শাসনের অভিযোগের দৃশ্য আসলেও রয়েছে ধরাছোঁয়ার আড়ালে। বিশেষ করে দেশজুড়ে অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনাতে এই ইউনিয়নে তার রাজত্ব বিস্তার গড়ে তুলেছে, বারঘরিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত একাধিক অবৈধ ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় এছাড়াও বারঘরিয়ার দৃষ্টি নন্দন পার্ক (মাঠ) থেকে প্রতিমাসে বাধ্যতামূল চাঁদা আদায় করেন তিনি। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই প্রশাসনকে উসকে দিয়ে ঐসব দোকানপাট ইটভাটা অভিযান চালানোর চাপ প্রয়োগ করা হয়। যানা যায় নিজের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অতীতে বেশ কয়েকটি ভাটা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলতে থাকায় চাঁদা না পাওয়াই প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কয়েকটি ইটভাটা ভেঙে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। একাধিক ভাটামালিক যা সরেজমিনে নিজেই ঘটনাস্থলে থেকে মোটা অংকের টাকা গুনে নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে সোপর্দ করেন। যার সরেজমিনে থাকা প্রতিবেদকের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে কালু মেম্বারের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো আইনগত সমস্যার সমাধান হয় না, কেউ তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়তে হয়। অভিযোগ রয়েছে তার নিয়ন্ত্রণে গড়া এলাকায় তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ মিলেছে।
সম্প্রতি বাবলু নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় গণমাধ্যমে কালু মেম্বারের চাঁদাবাজি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন এর জের ধরেই রাতের আঁধারে তার দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়, যা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। ঘটনাটি এলাকাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, তবে ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—প্রায় এক মাস আগে সদর উপজেলার বারঘরিয়া বাজারে সংগঠিত ককটেল হামলার সাথে জড়িত ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে এসেছে কালু মেম্বারের নাম। এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন বারঘরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদসহ সাধারণ জনগণ। হামলাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত, এবং স্থানীয় দুর্বৃত্তদের দিয়ে এটি বাস্তবায়ন করা হয় কালু মেম্বারের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় অন্যতম রাজনৈতিক কৌশলে।
ঘটনার পরপরই এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। স্থানীয়রা ধারণা করেছিলেন, মামলায় প্রকৃত দোষীদের নাম উঠে আসবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। মামলাটি কয়েকজনের নামে হলেও, কোনো অভিযোগপত্রে বা তদন্ত প্রতিবেদনে কোথাও কালু মেম্বারের নামের উল্লেখ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, এই মাস্টার মাইন্ড কালু মেম্বার রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশ্লেষক ও এলাকাবাসীর মতে, এটি প্রমাণ করে—তার পেছনে রয়েছে এক অদৃশ্য ও শক্তিশালী প্রভাববলয় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে তার এমন এক প্রভাব গড়ে তুলেছেন,যেখানে অপরাধ করেও ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে না। একাধিক গণমাধ্যম এই হামলার খবর প্রকাশ করলেও, কোথাও কালু মেম্বারের সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসেনি।
এই ঘটনাটি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও আইনের শাসন নিয়ে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে—তারা জানতে চায়, কে এই কালু মেম্বার? হঠাৎ জিরো থেকে হিরো হওয়া যেন সিনেমার ফিল্মকে হার মানিয়েছে তার পিছনে কোন অপশক্তি কাজ করছে, যার কারণে সব অপরাধ চাপা পড়ে যায়। গণঅভ্যুত্থানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারঘরিয়া ইউনিয়নের আলোচিত ইউপি সদস্য কালু মেম্বার একের পর এক নতুন কৌশলে জনগণকে শোষণ করছেন। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে জানা গেছে তার মূল লক্ষ্য প্রবাস ফেরত নিরীহ লোকজনকে টার্গেট করে তিনি ‘ওপেন হার্ট’, অভিযান’ বা ‘গণবিরোধী তৎপরতা’র মিথ্যা গল্প সাজিয়ে প্রতারণা করা। এছাড়াও ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ জানান অনেকেই।
স্থানীয়দের দাবি, কালু মেম্বার নিজেকে প্রশাসনের একাংশের প্রতিনিধি বলে জাহির করে থাকে নিজের মনগড়া ফাঁদ পাতিয়ে প্রশাসনের তদন্ত চলমান ও নাম ভাঙিয়ে —এই ধরণের ভয়ভীতি দিয়ে মানুষকে মানসিকভাবে কোণঠাসা করে অর্থ আদায় করেন। অনেকেই ভয়ে তার কথায় বিশ্বাস করে সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন এ নিয়ে অনেকেই লজ্জায় ক্যামেরার সামনে আসতে নারাজ। এই কৌশলের মূল লক্ষ্য—ক্ষমতা ধরে রাখা এবং তার রাজনৈতিক দখল আরও মজবুত করা এলাকাবাসীর ভাষায়, কালু মেম্বার এখন আর কোনো জনপ্রতিনিধি নন তিনি একক আধিপত্যের প্রতীক বলে তাদের দাবি মনে করছেন। তবে কেউ মুখ খুললেই তার বিরুদ্ধে মামলা নিশ্চিত। ব্যবসায় আগুন অথবা সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকি উঠে এসেছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের দাবি-কালু মেম্বার নিজের অবৈধ কার্যক্রমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সফল ও পরিশ্রমি নেতা সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ এর নাম এবং ছবি ব্যবহার করে জনগণকে জিম্মি করে হয়েছে বেপরোয়া। অন্যদিকে উচ্চ পর্যায় নেতাদের নাম ভাঙ্গানো তার শক্তির অন্যতম কৌশল” চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, কালুর মত লোক রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্নবিদ্ধ করাছে এর বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন! তবে ওই ইউনিয়নের জনগণের দাবি উদ্দেশ্য প্রণোদিত দলে অনুপ্রবেশকারী এ ধরনের চাঁদাবাজ ব্যক্তিদের দলে প্রবেশ করে রাজনৈতিক ও নেতাদের হে-প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। অবিলম্বে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর দাবি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে ওই ইউনিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার সম্ভব। বারঘরিয়া ইউনিয়নে প্রতিহিংসা খুবই কম এখানে উগ্র ব্যক্তিদের প্রয়োজন নেই বলেও জানান তারা। ।
এবিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য মোহাম্মদ কালু উদ্দিন কালু মেম্বারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন ইটভাটা, দোকান সরানো বা ককটেল হামলার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি প্রশাসনের সাথে সবসময় সমন্বয় করে কাজ করি,আমার বিরুদ্ধে বর্তমান একটি কুচক্র মহল হেয় করার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। ” অন্যদিকে একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জনগণ বলছেন কালু মেম্বার গণঅভ্যুত্থানের পর এলাকার শূন্য নেতৃত্ব পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে ‘অঘোষিত শাসক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রশাসনিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগে তিনি একটি ছায়া সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, যেখানে চাঁদাবাজি, হামলা, মামলা ও প্রতারণাই তার শাসনের প্রধান অস্ত্র।” হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। চলবে…..