1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
উখিয়ায় ১টি এসএমজি, ১৪লাখ টাকাসহ ৪জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী আদালতের রায় থাকার পরও জমি দখল পাচ্ছেন না প্রকৃত মালিক — হেঙ্গলকান্দীতে অবৈধ দখলের অভিযোগে প্রশাসনের নীরবতা রাণীশংকৈলে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী কৃষ্ণ কে ১ বছরের কারাদণ্ড কাঠালিয়ায় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত কুড়িগ্রামে ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি সেনাবাহিনীর হাতে আটক নবাগত ইউএনও আফরিন জাহানকে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব বেলকুচি শাখার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন পীরগঞ্জে হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এর মৃত্যু বার্ষিকী পালিত ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় যুবদলের লিফলেট বিতরণ জুলাই চত্বর এখন থেকে হবে আমাদের চেতনার জায়গা ও শক্তির জায়গা- বিভাগীয় কমিশনার ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ স্টার্ট নেটওয়ার্কের সহায়তায় বন্যা আগাম প্রস্তুতি প্রকল্প বাস্তবায়ন

১৬ই জুলাই ছাত্রলীগমুক্ত প্রথম ক্যাম্পাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ফজলে রাব্বি পরশ
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৪৮ বার পড়া হয়েছে
বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মাধ্যমে বিভিন্ন দমন নিপীড়নের শিকার হয় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীরা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফুঁসে ওঠে প্রতিটি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা দমন করার দায়িত্ব নেয় ছাত্রলীগ। হুমকিধামকি দিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধা দিত তারা। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালাতে থাকে তারা। শিক্ষার্থীরা বুঝে যায়, ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করতে না পারলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। এই বুঝ থেকে ছাত্রলীগকে প্রথমে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত বছরের ১৬ জুলাইয়ের বিকাল চারটার দিকে ক্যাম্পাস থেকে তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সব নেতাকর্মীকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাবি হয়ে ওঠে ছাত্রলীগমুক্ত প্রথম ক্যাম্পাস।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাবেক সমন্বয়কদের সাথে কথা বলে সেদিনের ঘটনা জানা যায়। তাদের বরাতে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করার মাধ্যমে। দিনটি ছিল ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই। সেদিন শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ছিল বেলা আড়াইটায়। তবে শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি নস্যাৎ করতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে একই স্থানে জমায়েতের ডাক দেয় ছাত্রলীগ। কিন্তু সবকিছু গোপন রেখে দু-তিন ঘণ্টা আগে থেকে শিক্ষার্থীদের বের হয়ে আসতে বলা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর থেকে দুশো-আড়াইশোর মতো শিক্ষার্থী নিয়ে একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে যায়। সেখানে প্রায় ১০০ জনের মতো পুলিশ থাকলেও তারা কোনো বাধা দেয়নি। সেসময় ছাত্রলীগের হাত থেকে প্রতিরোধের জন্য সকলের হাতে ছিল রড, পাইপ ও লাঠিসোঁটা।
শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তে সব হলের শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হতে থাকে। বিক্ষোভ মিছিলটি জোহা চত্বরের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্যারিস রোডে এলে বিপরীত দিক থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী এসে মিলিত হয়। মিছিলটি মেয়েদের হলের সামনে এলে হাজার দেড়েকের মতো মেয়ে শিক্ষার্থীদের এক দল তাতে যোগ দেন।
মিছিলটি বিজ্ঞান ভবনের পাশ দিয়ে হবিবুর রহমান হলের মাঠ দিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে আসে। সেসময় শিক্ষার্থীরা হলের সামনে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হলের ভেতর থেকে প্রতিহত করতে শুরু করেন। সেখানে ইটপাটকেল খেয়ে মাদার বখ্শ হলের সামনে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ততক্ষণে সো‌হ্‌রাওয়ার্দী ও জোহা হলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শাহ মখ্দুম, লতিফ ও আমীর আলী হলের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল গালিবকে তাড়া করেন।
ফলে সাড়ে ১৫ বছরের রাজত্ব ফেলে মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সাধারণ সম্পাদক গালিবের পালানোর ১০ সেকেন্ডের ভিডিয়ো ব্যাপক ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার হলের কক্ষটি ভাংচুর চালায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এরপর বিক্ষোভ মিছিলটি বিজয় ২৪ হলের (তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল) সামনে এসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রুম ভাঙচুর করে। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে পুলিশ উদ্ধার করে অন্যত্র নিয়ে যায়। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারির কক্ষ এবং দপ্তর সেল থেকে তিনটি পিস্তল, ছয়টি রামদা, ১০-১৫টি মদের বোতল, কয়েকটি দা-সহ রড উদ্ধার করেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। পরে উদ্ধারকৃত এসব অস্ত্রগুলো রাবি প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।
সেদিন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পালিয়ে যাওয়া প্রত্যক্ষ করেন সাবেক সমন্বয়ক মেশকাত মিশু বলেন,১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ছিল বেলা আড়াইটায়। এ কর্মসূচিকে নস্যাৎ করতে একই স্থানে জমায়েতের ডাক দেয় সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ। এছাড়া প্রতিটি হলের সামনে চেয়ার পেতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে তারা। কয়েকটি হলের গেটে তারা তালা মেরে দেয় যাতে হলে থাকা শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে যেতে না পারে। তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে সেদিন সবচেয়ে বড় আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, ওইদিন আমি ছাত্রলীগের গতিবিধি লক্ষ করার জন্য মাদার বখ্শ হলের সামনে আসি। দেখি ছাত্রলীগের সেক্রেটারি গালিব তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে বেঞ্চে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরেই কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর একটি বিক্ষোভ মিছিল আসাদুল্লাহ-হিল গালিব ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের তাড়া করেন। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। নিমেষেই তাদের দীর্ঘদিনের মসনদ ভেঙে খান খান হয়ে যায়। বিরল সে মাহেন্দ্রক্ষণ স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য আমার হলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে প্রথম ছাত্রলীগমুক্ত প্রথম ক্যাম্পাস।
আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সানজিদা ঢালি। তিনি বলেন, ১৬ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। এই ঘটনার জন্য আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল ১৫ তারিখ থেকেই। যদিও আন্দোলনের সময় নির্ধারণ ছিল ১৬ জুলাই বিকেল ৩টা। তবে ছাত্রলীগের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় আমরা গোপনে সময় এগিয়ে এনে দুপুর আড়াইটায় আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নিই। মেয়েদের হলগুলোর সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। সেই অনুযায়ী আমি ১৬ তারিখ দুপুর ১টা থেকেই মন্নুজান হলে ঘণ্টা বাজিয়ে ডাকাডাকি শুরু করি এবং আন্দোলনের জন্য মেয়েদের জড়ো করতে থাকি। পরে একত্রিত হয়ে আমরা অন্যান্য হলগুলোতেও যাই এবং স্লোগানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আহ্বান জানাতে থাকি।
তিনি আরও বলেন, সব হলের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে যখন মন্নুজান হলের সামনে অবস্থান নেয়, তখন দেখি ছেলেরা প্যারিস রোড হয়ে মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসছে। আমরা মেয়েরা সেই মিছিলে যুক্ত হই এবং একসঙ্গে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করি। আমাদের মিছিলের সংখা এতটাই বড় ও শক্তি।
এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com