দিনাজপুরের খানসামা ও বীরগঞ্জ উপজেলাকে বিভক্ত করেছে আত্রাই নদ । দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াতের জন্য খামারপাড়া ইউনিয়নের চেহেলগাজী এলাকায় নদের ওপর ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। দুই মেয়াদে সময় বাড়িয়ে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫৬ শতাংশ। বাকি কাজ রেখেই এক বছর আগে লাপাত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)সূত্রে জানা যায় ‘গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় খানসামা ও বীরগঞ্জ উপজেলার আত্রাই নদে ৪৫০ মিটার সেতুটির নির্মাণকাজের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুরমা এন্টারপ্রাইজ কাজটির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। ব্যয় ধরা হয় ৪৪ কোটি ৯৬ লাখ ৪২ হাজার ২৬৩ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করার সময় ২০২১ সালের ২ এপ্রিল। তবে নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। দ্বিতীয়বারের মতো ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায় এলজিইডি। দুই মেয়াদে সময় বাড়িয়ে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫৬ শতাংশ।সরেজমিনে দেখা যায়, জয়ন্তীয়া ঘাট এলাকায় সেতুর পিলার স্থাপন হয়েছে। সেতুর পাঁচটি অংশের ৩টি স্প্যান ঢালাই হয়েছে। বাকি পিলার শুধু নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। নির্মাণকাজে ব্যবহার হওয়া কিছু সামগ্রী, মালবাহী ট্রলি ও পাহারাদারদের রুম রয়েছে। এখানে অলস সময় কাটাচ্ছেন কাজ শুরুর সময় থেকে নির্মাণসামগ্রী দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুজন • দুই মেয়াদে সময় বাড়িয়ে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫৬শতাংশ। এক বছর আগে লাপাত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাহারাদার। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আত্রাই নদের পূর্বদিকে থানসামা উপজেলার মধুবনপুর, নেউলা, দুহশুহ, কায়েমপুর, খামারপাড়া ও জোয়ার গ্রাম। নদের পশ্চিমে মধুবনপুর, বাছারগ্রাম, রাজিবপুর, ভোগডোমা, রঘুনাথপুর, ছয়গুটি, ধুনট ও সনকা গ্রাম। উভয় পারের গ্রামে প্রায় ১ লাখের বেশি লোকের বসবাস। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। শুষ্ক মৌসুমে ভরসা কাঠের তৈরি সাঁকো, যাতে চলাচলে দিতে হয় টোল। ঝুঁকি নিয়ে পারাপারে দুর্ভোগ-দুর্ঘটনা নিত্যসঙ্গী। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে।সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে না। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বলছেন, করোনাকালীন নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার অজুহাতে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে দুই মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত করা হয়েছিল। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৫৬ শতাংশ কাজ শেষ করে বাকি কাজ বন্ধ রাখে।বাঁশের সাঁকোয় টোল দিয়ে পারাপার হওয়া মানিক ইসলাম, কামরুজ্জামান, রেজাউল করিম ও ফাতেমা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, জনসাধারণ থেকে শুরু করে এই সাঁকো দিয়ে বাইসাইকেল, ভ্যানচালক ও ব্যাটারিচালিত চার্জার ভ্যান ,জেলা পরিষদের মাধ্যমে
ইজারা দেওয়া এই খেয়াঘাট দিয়ে পারাপার হয়। ভ্যানচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, সেতু না হওয়ায় এই পথে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কম হলেও জীবিকার তাগিদে অপেক্ষায় থাকতে হয়। সেতু হলে চলাচলেও যেমন পরিবর্তন আসবে তেমনি আয়- উপার্জনও বৃদ্ধি পাবে।রোগী নিয়ে জরুরি সময়ে বিপাকের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর সন্তুষ্ট ছিলাম যে কাজটা হলে উপকার হবে কিন্তু ৬ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। খামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক চৌধুরী বলেন, এই সেতুর অভাবে দুই অঞ্চলের মানুষকে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। এতে কৃষিপন্য পরিবহনে বাড়তি খরচ, রোগী ও জরুরি প্রয়োজনে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাই দ্রুত সময়ে সেতুর কাজ শেষ করা প্রয়োজন। সেতুর মালামালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাহারাদার আব্দুল বাকী বলেন, ২০১৮ সাল সেতুর কাজ শুরুর সময় থেকে দায়িত্বে আছি। গত এক বছর থেকে কাজ পুরোপুরি বন্ধ। আমরাও গত ৬ মাসের বেতন পাইনি।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এলজিইডি দিনাজপুর নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, জয়ন্তীয়া ঘাটে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করতে ইতঃপূর্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকবার চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবুও কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক। নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে কাজ বন্ধ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে