নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় একটি পরীক্ষাকেন্দ্রের একটি কক্ষের দুই পরীক্ষার্থীকে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় ও সুযোগ দেওয়ায় ওই কেন্দ্রের সচিব, হল সুপারসহ চারজনকে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে ওই শিক্ষকদের। এ ছাড়া বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।অভিযুক্ত শিক্ষকেরা হলেন, কেন্দুয়া সায়মা শাহজাহান একাডেমির কেন্দ্রসচিব ও মজলিশপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন দেবনাথ, হল সুপার ও আবদুর রহমান স্মৃতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম কিবরিয়া, পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সায়মা শাহজাহান একাডেমির সহকারী শিক্ষক সুব্রত লাল ভট্টাচার্য ও মজলিশপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন।
পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া চার শিক্ষকের পরিবর্তে গন্ডা দ্বি–মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দিলোয়ার হোসেনকে কেন্দ্রসচিব, গন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে হল সুপার, নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলমগীর ও গন্ডা দ্বি-মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নয়ন চন্দ্রকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসির গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় সায়মা জাহান একাডেমি থেকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতা ও জনপ্রতিনিধির ছেলে ও ভাতিজা অংশ নেয়। পরে অভিযোগ ওঠে যে ওই কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা কয়েকজন শিক্ষক ওই দুই শিক্ষার্থীকে নকলের সুযোগসহ অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দিয়েছেন। অন্য পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। পরে সায়মা জাহান একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. শহীদ মিয়া ওই দুই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা সংগ্রহ করে নেন।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেন। পরে ইউএনও ঘটনার সত্যতা পেয়ে আজ পরীক্ষা শুরু আগে কেন্দ্রসচিবসহ চারজনকে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করাসহ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। সেই সঙ্গে ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।এদিকে, ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আজ এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ইসলাম ধর্ম পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষা চলাকালে ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শামছুল ইসলাম কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন।কেন্দুয়ার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মো. রাজীব হোসেন বলেন, কেন্দ্র সচিবসহ চারজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার শিক্ষা বোর্ডের কন্ট্রোলারের সঙ্গে কথা বলে ওই কেন্দ্রের আসনগুলোরও পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন কেন্দ্র সচিব ও হল সুপার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কেন্দুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল আলম বলেন, তদন্তের কাজ চলছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।