লুৎফুজ্জামান বাবর ভারত সরকারের কাছে একটা আতঙ্কের নাম। লুৎফুজ্জামান বাবর সেভেন সিস্টারে বিদ্রোহী দল বানিয়ে দিয়ে ভারতে অস্থিতিশীল করে দিয়েছিলেন। চীন-পাকিস্তান মিলে ভারতকে যতটুকু ক্ষতি করতে পারেনি তার চেয়ে বেশি লুৎফুজ্জামান বাবর করতে পেরেছেন।
২০০৪ সালে তিনি ১০ ট্রাক ভর্তি অস্র-গোলাবারুদ, রকেটের লঞ্চার নিয়ে ভারতে পাঠাতে চেয়েছিলেন। তখন তারা নিজেদের দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু করে। অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও মেঘালয় মূল ভারত থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল। আর সেখানের আন্দোলনকারীদের ১০ ট্রাক অস্ত্র সরবরাহ করতে চেয়েছিলেন এই লুৎফুজ্জামান বাবর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করতে পারেননি।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার ২০০১-২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকার সময় যেসব ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন এবং সরকারের মধ্যে প্রবল অস্বস্তি তৈরি করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ১০ ট্রাক সমপরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান আটক করা হয় ২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল রাতে। দুটি বড় ট্রলারে করে এসব অস্ত্র সমুদ্রপথে আনা হয় চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার বা সিইউএফএল জেটিতে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকই মনে করেন, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের সেই ঘটনা ভারতের সঙ্গে তৎকালীন বিএনপি সরকারের মধ্যে শীতল সম্পর্কের সূচনা করেছিল। দেশটির তৎকালীন কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন যে ভারতের চাপে পড়েই বিএনপি সরকার সেসব অস্ত্র আটক করে। অন্যথায় সেসব অস্ত্র ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে যেত। বিএনপি অবশ্য বরাবরই দাবি করে করে যে সরকার তখন ব্যবস্থা নিয়েছিল বলেই সেসব অস্ত্র আটক করা হয়েছে।
সরকার যদি চাইতো তাহলে সেগুলো ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে যেত। কিন্তু বক্তব্য যাই হোক, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার পর থেকে বিএনপি সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়। ভারতের কর্মকর্তারা মনে করেন, এতো বড় আকারে না হলেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্ত্র ঢুকেছে। দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে সেটি দেখিয়ে দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে সিইউএফএল জেটিতে এসব অস্ত্র খালাস হবার সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সহায়তায় সেগুলো আটক করা হয়। উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ছিল চীনের তৈরি একে-৪৭ রাইফেল, সেমি অটোমেটিক রাইফেল, রকেট লঞ্চার, রকেট শেল, পিস্তল, হ্যান্ড গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্য। এই অস্ত্র যখন গণনা করা হয় তখন দেখা গেল ১ হাজার ৭৯০টি বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র, সাড়ে ১১ লাখ গুলি, সাড়ে ৬ হাজার ম্যাগাজিন, ২৭ হাজার গ্রেনেড এবং ১৫০টি রকেট লঞ্চার। সেদিন দিবাগত রাত দুইটা থেকে ভোর ছয়টা এ উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তৎকালীন ডিসি (পোর্ট) আবদুল্লাহেল বাকি ও এসি (পোর্ট)। প্রায় ত্রিশজন পুলিশের সঙ্গে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় কোস্টগার্ডের সদস্যরা।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফু্জ্জমান বাবর বলেছিলেন, চট্টগ্রামে আটককৃত ১০ ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার এবং নাশকতার জন্য আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কথা সরাসরি উল্লেখ না করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তারা যেহেতু এ সরকারের পতন ঘটাবে বলেছে তাতে এ বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। অন্যদিকে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা অস্ত্র আটকের ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন।