স্থানীয় নাম চায়না জাল। কেউ বা একে দুয়ারির জাল বলেও চিনে থাকে। এই জালের ব্যবহারে ছোট বড় মাছ ছাড়াও সবরকম জলজ প্রাণী আটকা পড়ে অকালে প্রাণ হারায়।মাছ ও জলজ প্রাণী অকালে মারা যাওয়ায় হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র।মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে,দেশে এই জাল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জালটির ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ায় এর বিপণন,সরবরাহ,বহন এমন সমস্ত কর্মকেই অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এই আইন লঙ্ঘন করছে অনেকেই।
এই আইন লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতায় মাধবপুর থেকে গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী,গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোজ (শনিবার) বিকেল ৪.১৯ মিনিটে মাধবপুর টু ঢাকা টু চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে ৮টি সাদা বস্তায় প্রায় ৭০মন নিষিদ্ধ চায়না জাল বুকিং দেয়া হয় “ইউএসবি এক্সপ্রেস” কুরিয়ারের মাধবপুর শাখায়। তবে বস্তায় পণ্যটিকে “সুতা” বলে বুকিং করা হয়। যার প্রেরক এবং প্রাপক মোঃ শফিকুল ইসলাম। বুকিংয়ের সময় দেয়ে হয় তার নাম এবং ব্যাক্তিগত মুঠোফোন নাম্বার।পরের দিন ঢাকা মেট্রো-১২-১৯৪৬ নাম্বার গাড়িতে করে পণ্যটি ঢাকার মাজার রোডের কবরস্থান সংলগ্ন ইউএসবি এক্সপ্রেস কুরিয়ারে এসে পৌঁছালে বস্তা গুলো “Hold” করে রাখা হয়েছে বলে মাধবপুর এবং ঢাকার ইউএসবি এক্সপ্রেসের কর্মরত ছোট বড় একাধিক কর্মকর্তার সূত্রে আমাদেরকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এই বিষয়ে প্রাপক ও প্রেরক মোঃ শফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি পন্যটি তার এবং এটি নিষিদ্ধ চায়না জাল বলে আমাদের নিশ্চিত করেন। নিষিদ্ধ জেনেও আনেকেই করছে তাই তিনিও করছেন বলে আমাদের জানান মোঃ শফিকুল ইসলাম। এই জাল “ইউএসবি এক্সপ্রেস” এর মাধ্যমেই আরো একাধিকবার আদান প্রদানের কাজ করেছেন যার বুকিং স্লিপ তার কাছে আছে বলেও জানান তিনি। ঢাকা এসে কাগজগুলো আমাদের দেখাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোজ(সোমবার) বিষয়টি নিয়ে ঢাকার মাজার রোড “ইউএসবি এক্সপ্রেস” কুরিয়ারের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে গেলে,প্রথমেই আমরা সাংবাদিকগন নিজেদের পরিচয় সুনিশ্চিত করি এবং কেন বস্তা গুলো “Hold” করে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এখনো জানানো হয়নি তা জানতে চাই।বস্তা প্রতি বুকিং খরচ কম দেয়া হয়েছে বলেই “Hold” করে রাখা হয়েছে এই কথা জানান সেখানে কর্মরত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোঃ জীবন এবং মোঃ আবু তাহের। বস্তায় নিষিদ্ধ চায়না জাল রয়েছে বলে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য রয়েছে বলে তাদের জানাই আমরা।
এই কথা শুনেই আমাদেরকে নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন করতে থাকেন তারা। মোঃ জীবন নিজেকে প্রতিষ্ঠানের মালিকের ভাই এবং একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেও জানান। ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামের বড় ভাই মোঃ মাইনুল ইসলাম “ইউএসবি এক্সপ্রেস” গ্রুপের “CEO” বলে জানান। তারা তাদেরই গনমাধ্যম “DHAKA POST”এর সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন এবং আমাদের সাথে কথা বলতে বলেন।মহিউদ্দিন সরকার সুন্দর ব্যবহারে আমাদের পরিচয় সুনিশ্চিত করনেই আমাদের কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করেন। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তিনি বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা বলেন। তবে উর্ধ্বতন এই ২ কর্মকর্তা মোঃ জীবন এবং মোঃ আবু তাহেরের একাধিক ফোন পেয়েও সেদিন দারুসসালাম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির আরেক কর্মকর্তা মোঃ তানভীর আমাদের বলেন, যেহেতু আমরা জাল খুব ভালো চিনিনা তাই আগামীকাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে বস্তা গুলো খোলা হবে। আপনারা কেন এই পন্য বহন করেন এই প্রশ্নের জবাবে মোঃ তানভীর বলেন, কুরিয়ারের আইনে কোথাও লেখা নেই এই পন্য বহন করা যাবেনা। তাছাড়া আমরা জানিনা এটি সাধারণ জাল নাকি নিষিদ্ধ চায়না জাল। কথা শেষে মোঃ জীবন, মোঃ আবু তাহের, মোঃ তানভীর এবং সাথে আরো কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় আমরা “Hold” করে রাখা বস্তা গুলোর ভিডিও চিত্র ধারণ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোজ(মঙ্গলবার) দুপুর ২.৪৪মিনিটে মুঠোফোনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে দারুসালাম থানার সাব ইন্সপেক্টর জুয়েল। তিনি আমাদের পরিচয় নতুন করে জানতে চান এবং ব্যাক্তিগত তথ্য (কোথায় বাসা) জানতে চান। আমারা তাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করি এবং কেন গতকাল একাধিক ফোনে তারা আসেনি জানতে চাই। প্রশ্নের জবাবে,তিনি এখন “ইউএসবি এক্সপ্রেস”কুরিয়ারেই উপস্থিত আছেন বলে জানিয়ে, আর কিছুই না বলে ফোনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।পরে তাকে একাধিক ফোন দিলেও আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।তবে তার কিছু সময় পর “ইউএসবি এক্সপ্রেস” কুরিয়ারের কর্মকর্তাগণের মাধ্যমে জানাতে পারি,মোঃ শফিকুল ইসলাম এবং তার নিষিদ্ধ চায়না জাল আটক করেছে সাব ইন্সপেক্টর জুয়েল। এই বিষয়ে “ইউএসবি এক্সপ্রেসের” পক্ষ থেকে এডমিন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলার তথ্যটি “ইউএসবি এক্সপ্রেসের” কর্মরত কর্মকর্তাদের একাধিক সূত্র আমাদের নিশ্চিত করেছেন।